Saturday | 8 February 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
Saturday | 8 February 2025 | Epaper
BREAKING: এবারও শিরোপা বরিশালের ঘরে, গড়লো ইতিহাস      বিএনপি ক্ষমতায় এলে কৃষকের মুখে হাসি থাকবে: কৃষিবিদ তুহিন      বয়স্কদের ছাড় দিয়ে তরুণদের নেতৃত্বই মানতে হবে: সিনিয়র সচিব      শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে সন্ত্রাসীদের সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন: প্রধান উপদেষ্টা      জাতীয় নির্বাচন বছরের শেষ দিকে হতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা      যমুনা সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন      ৩ দিনের মধ্যে ইস্যু না হলে উড়োজাহাজের বুকিং টিকিট বাতিল      

দশমিনায় কালের সাক্ষী ৫০০ বছরের পুরানো মসজিদ

Published : Tuesday, 7 January, 2025 at 6:00 PM  Count : 593

পটুয়াখালীদশমিনায় মুঘল সাম্রাজ্যের শাসনামলের এক গম্বুজ ও চার মিনার বিশিষ্ট শৈল্পিক সৌন্দর্যের দৃষ্টিনন্দন আমির উল্লাহ্ মুন্সী জামে মসজিদ শত শত বছর ধরে টিকে আছে। যা দেখে কৌতুহলী মানুষের বিষ্ময়ের শেষ নেই। 

৫০০ বছর আগে ১৫২৬ খ্রীস্টাব্দে মোঘল স্থাপত্য রীতিতে তৈরী প্রাচীন এই মসজিদটি আজও দাঁড়িয়ে থাকার পেছনে রয়েছে গ্রামের ঐতিহ্য প্রিয় ধর্মপ্রাণ কিছু মানুষের ভক্তি ও ভালোবাসা। তাদের ঐকান্তিক চেষ্টায় উপজেলার মুসলিম সভ্যতার একমাত্র দুর্লভ এই প্রাচীন নিদর্শনটি আজও টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হয়ে।

প্রাচীন এই মসজিদটির অবস্থান জেলার দশমিনা উপজেলার ৫ নং বহরমপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ আদমপুর গ্রামে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ১২টি পিলার বিশিষ্ট প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার মসজিদটির উপড়ের দিকে সমান মাঝ বরাবর রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি গম্বুজ ও চার কোণে চারটি মাঝারি আকারের মিনার। চার দেয়ালের ভিতরের দিকে উত্তর-দক্ষিণে সাড়ে ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও পূর্ব-পশ্চিমে সোয়া ১৫ ফুট প্রস্থের মেঝেতে তিন কাতারের প্রতিটিতে দশ জন করে মোট ত্রিশ জন মুসুল্লী ও একজন ইমাম একই সাথে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। এদিকে মসজিদটির প্রতিটি দেয়াল প্রায় ৫ ফুট চওড়া হওয়ায় বাহির পাশ দিয়ে এটি উত্তর-দক্ষিণে সাড়ে ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও পূর্ব-পশ্চিমে সোয়া ২৫ ফুট প্রস্থ রয়েছে। 

উত্তর ও পূর্ব পাশের দেয়ালে একটি করে মোট দুইটি দরজা রয়েছে। দক্ষিণ পাশের দেয়ালে একটি দরজা থাকলেও সেটিকে সংস্কার করে জানালায় রূপান্তরিত করেছেন ব্যবস্থাপণার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আমির উল্লাহ্ মুন্সীর বংশধররা। বাহিরে দেয়াল জুড়ে বিভিন্ন নকশা দ্বারা সজ্জিত মসজিদটির অভ্যন্তরে পশ্চিম দেয়ালে একটি মিহরাব রয়েছে। তাছাড়া হালকা সবুজ রঙ করায় প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন কিছুটা বিলীন হয়েছে একমাত্র গম্বুজ ও মিনার চারটির উপড়িভাগে। মসজিদ সংলগ্ন পিছনের দিকে উত্তর-পূর্ব কোনে রয়েছে আশির দশকে পটুয়াখালী জেলা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ হারুনুর রশিদের কবর।
ইতিহাস ও তথ্য যাচাই করে জানা যায়, অতীতে এই মসজিদ সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল প্রতিষ্ঠাতা মুন্সী আমির উল্লাহর বসতবাড়ি ও উত্তর পাশে ছিল তার ব্যবহারের জন্য বিশাল দীঘি। আশে পাশে ছিল চরাঞ্চল। কালের আবর্তে এসব চরাঞ্চল উচুঁ হয়ে চাষাবাদের জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠেছে মুসলিম ঘনবসতি। তাই পাঁচ’শ বছরের আগের সেই বাস্তবতা এখন পাল্টেছে। বেড়েছে জনসংখ্যা। এ কারণে ইমামসহ একত্রিশ জন মুসুল্লী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মসজিদটির পূর্ব পাশে ফাঁকা জায়গায় খুঁটি স্থাপন করে তার ওপরে টিনের চালা দিয়ে আরও অতিরিক্ত ১৫০ জনের জামাতে নামাজ আদায়ের জায়গা তৈরী করেছেন স্থানীয়রা। তাতেও গ্রামের মুসুল্লীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় সময়ের প্রয়োজনে গ্রামে গড়ে তোলা হয় একাধিক মসজিদ। এতে অযত্ন আর অবহেলায় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে মসজিদটি। ঐতিহ্য রক্ষা করতে মসজিদটি সংরক্ষণের দাবী স্থানীয়দের।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, চুন, সুরকি ও পোড়া ইটের তৈরী প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ মসজিদটি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই ভীড় করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীরা। শিগগিরই সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নিলে যেকোন সময় ধ্বংস হতে পারে প্রাচীন এই মসজিদ। তাই এটি সংরক্ষণে সরকারি উদ্যোগ চান স্থানীয়রা।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রাম থেকে আসা দর্শনার্থী ফিরোজ আহমেদ ডেইলি অবজারভারকে বলেন, দেখতে এসেছি এই পুরাকীর্তি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। আমরা শুনেছি এটি পাঁচ’শ বছর আগের মুঘল আমলের। এটি যত্ন করা প্রয়োজন। 
 
মুন্সী আমির উল্লাহর ষষ্ঠ বংশধর মসজিদটির বর্তমান মুয়াজ্জিন ওই গ্রামের মো. শাহআলম মুন্সী (৮২) ডেইলি অবজারভারকে বলেন, আজ থেকে প্রায় ৪৫ বছর আগে ৯২ বছর বয়সে আমার পিতা নুরু মুন্সী মারা যান। আমার পিতা ও তাঁর পূর্ব পুরুষ থেকে শোনা ১৫১০/১৫১২ খ্রীষ্টাব্দের দিকে বর্তমান বাউফলের কালিশুরী এলাকা থেকে এসে এখানে বাড়ি করেন মুন্সী আমির উল্লাহ। তখন এ গ্রামে গুটিকয়েক পরিবার বাস করতো। এখানে একটি মসজিদের দরকার হলে তিনি ১৫২৬ খ্রীষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটির বর্তমান অবস্থা শোচনীয়। আর্থিক সংকটের মধ্যেও নিজেরা যেভাবে পারি এটি রক্ষণাবেক্ষণ করি। মুসুল্লিদের আর্থিক সহায়তায় মেরামত করি। মসজিদটি রক্ষায় সরকারি কোনো অনুদান পাই নাই। সরকারের কাছে আবেদন প্রাচীন এই নিদর্শনটি আমাদের পরবর্তী বংশধররা যাতে দেখতে পায় সরকারের সেই ব্যবস্থা করা উচিত।

একই গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, এটা শুধু এ গ্রামের সম্পদ নয়। এটি দশমিনা উপজেলা তথা পটুয়াখালী জেলার একটি প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য। এটা সংরক্ষণ খুবই জরুরী। কালের বিবর্তনে কিছুটা হলেও হুমকির মুখে মসজিদটি। তাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবী করবো এটি যেনো সংরক্ষণ করা হয়। 

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন মুঠোফোনে ডেইলি অবজারভারকে বলেন, এটি প্রত্নতত্ত্বের অধীনে আছে কিনা জানি না। নইলে আমরা লিখবো তাদের কাছে। আমি আজই ইউএনও দশমিনার সাথে কথা বলবো। তিনি আমাকে একটা প্রতিবেদন দিবেন। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

প্রাচীন নিদর্শনের এ মসজিদটি সংরক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

এসআর
Related topic   Subject:  পটুয়াখালী   দশমিনা  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close