নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যেরবাজার নৌ-ঘাটে যাত্রী ও মালপত্র উঠা নামা করার জেটি ও পল্টুন ভেঙ্গে যাত্রী চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে এ ঘাটে যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় রুমেলে এ ঘাটের পল্টুন, জেটি ও স্পাড ভেঙ্গে যায়। গত ৮ মাসেও বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঝুঁকিপূর্ণ ঘাটটি মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে নারী পুরুষ শিশুসহ জনসাধারণকে চলাচল করতে হচ্ছে। ঘাট মেরামতের জন্য ইজারাদার মো. শফীকুল ইসলাম বাবু বিআইডব্লিউটিএ উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন ফল পায় নি। এ ঘাটে চলতে গিয়ে পড়ে আহত হয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভপাত হয়ে সন্তান মারা যায়। এছাড়াও অর্ধশত নারী পুরুষও আহত হয়েছেন।
জানা যায়, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার নৌ-ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, কুমিল্লার মেঘনা, হোমনা, বাঞ্ছারামপুর ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। এছাড়াও হাসপাতালসহ বিভিন্ন জরুরী সেবা নিতে মানুষ এ ঘাট ব্যবহার করে থাকেন। গত বছরের ২৭ মে ঘুর্ণিঝড় রুমেলে বৈদ্যোবাজার ঘাটের জেটি, পল্টুন ও স্পাড ভেঙে যায়। ভাঙা স্থান দিয়েই জন সাধারণকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে গত আট মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। ভাঙা জেটিতে পড়ে গিয়ে গত ৩রা ডিসেম্বর চালিভাঙ্গা গ্রামের হোসেন মিয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শিবলী বেগম আঘাত পেয়ে গর্ভপাত হয়ে সন্তান মারা যায়। দ্রুত মেরামত না করা হলে আহতের সংখ্যা দীর্ঘ হতে থাকবে বলে জানিয়েছেন বৈদ্যেরবাজার ঘাটের শুল্ক আদায়ের ইজারাদার।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সোনারগাঁওয়ে বৈদ্যেবাজার ঘাটে একমাত্র নৌ চলাচলের জেটিটি ভেঙে বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ মানুষ নৌ পথে চলাচল করে থাকেন। পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ পথ ব্যবহার করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও মুন্সিগঞ্জে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়াও স্থানীয় স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ ঘাট ব্যবহার করে থাকেন। বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উদাসীনতায় মেরামতের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ জেটি এখন বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। কোথাও রেলিং ভেঙে পড়েছে, বিভিন্ন স্থানের কাঠ উঠে বিপজ্জনক হয়ে আছে। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষজন ঘাটে নেমেই জেটিতে নামার সময় বিপাকে পড়েন। পল্টন থেকে নামতে বাশের সাকো ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে যাত্রীদের মালপত্র উঠা নাম করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া বলেন, বৈদ্যেরবাজার ঘাট ব্যবহার করে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাতায়ত করেন পর্যটকরা। নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলাার দিয়ে মেঘনা নদী, মেঘনা উপজেলার দর্শনীয় বিভিন্ন চর ও বারদীর নুনেরটেক মায়াদ্বীপে দেশী ও বিদেশী পর্যটকরা অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করে থাকেন।
নুনেরটেক মায়াদ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটক আসাদুজ্জামান ও রিপা দম্পত্তি বলেন, এ পথ ব্যবহার করে এতো সুন্দর পর্যটন এলাকায় যাওয়ার জেটিটি বিধ্বস্ত ও জরাজীর্ণ। মনে হচ্ছে, যেকোনো সময় জেটিটি ভেঙে পড়ে যাবে।
আলমগীর হোসেন নামের আরেক পর্যটক বলেন, এ জেটিটি সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। কোথাও রেলিং নেই, আবার কোথাও কোথাও কাঠের পাটাতন উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময় ভাঙা জেটি থেকে পানিতে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বৈদ্যেরবাজার নৌ-ঘাটের শুল্ক আদায়ের ইজারাদার মো. শফীকুল ইসলাম বাবু জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ঘাটে মানুষজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। পল্টুন থেকে নামার জন্য বাঁশের সাকোঁ ব্যবহার করতে হচ্ছে। ঘাট মেরামতের জন্য বিআইডব্লিউটিএ এর কাছে আবেদন করেছে। সংস্কারের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ মেঘনা ঘাট বন্দরের উপ-পরিচালক মো. রেজাউল করিম জানান, এ স্টেশনে নতুন যোগদান করেছি। বৈদ্যেরবাজার ঘাট পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআর