বরগুনায় জেলা পরিষদের ইজারা দেয়া আমতলী পুরাকাটা খেয়াঘাটে কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও যাত্রী সেবার জন্য নেই কোনো বরাদ্দ। অনেক ঘাটে নেই যাত্রীদের ওঠা-নামার সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট ভাবে আলাদা কোনো ঘাটের ব্যবস্থা। যাত্রীদের ওঠা-নামার জন্য পৃথক ঘাটের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
তবে খেয়া পারাপার হওয়া যাত্রীদের সুবিধা বাড়াতে এবং ঘাটের মান উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর পুরাকাটা-আমতলী খেয়াঘাট থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ইজারা আদায় করা হয়েছে। জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকা এ ঘাটটি দিয়ে প্রতিদিন যাত্রী পারাপারের সংখ্যার ভিত্তিতেই বছর হিসেবে কম-বেশি ইজারা নির্ধারণ করা হয়।
প্রতি বছর আমতলী পুরাকাটা খেয়াঘাটে কোটি টাকা ইজারা আদায় হলেও ঘাট ও যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়না বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ঘাটের ইজারাদার ও যাত্রীরা। এছাড়াও, সঠিক তদারকির অভাবে বিভিন্ন ঘাটে নির্মিত যাত্রী ছাউনি দখল করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান তারা।
সরেজমিনে বরগুনার আমতলী পুরাকাটা খেয়াঘাট ঘুরে দেখা যায়, ইজারা আদায়ের দিক থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব আসে পুরাকাটা-আমতলীর খেয়াঘাট থেকে। তবে এই খেয়া পারাপারের জন্য আলাদা কোনো ঘাট না থাকায় ফেরির পল্টুন থেকেই ওঠা নামা করতে হয় যাত্রীদের। এতে যাত্রীদের মালামাল ও মোটরসাইকেল ওঠাতে-নামাতে গিয়ে প্রায় সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা। এছাড়াও যাত্রীদের সুবিধার্থে পুরাকাটায় নির্মিত যাত্রী ছাউনিটি জেলা পরিষদের তদারকির অভাবে দখল করে তালাবদ্ধ করে বসবাস করছেন স্থানীয় এক মসজিদের মোয়াজ্জিন।
এদিকে, রাজস্ব ফেরিঘাটকে খেয়াঘাট হিসেবে ব্যবহার করায় একদিকে ফেরিতে বিভিন্ন গাড়ি ওঠানামা করছে অপরদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একই পথে খেয়ায় ওঠা-নামা করছেন যাত্রীরা। বর্ষার সময়ে নদীর পানি বেড়ে গেলে সাঁকো দিয়ে ওঠানামা করতে হয়।
ঘাটের ইজারাদারদের পক্ষে ঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম নবীন বলেন, 'প্রতি বছরে এ ঘাটটি কোটি টাকায় ইজারা নিতে হয়। তবে খেয়ার জন্য আলাদা কোনো ঘাট নির্মাণ করা হয়না। ফলে ফেরিঘাটের পল্টুনকেই খেয়ার ঘাট হিসেবে আমাদের ব্যবহার করতে হয়।'
আমতলী ও পুরাকাটা খেয়ার নিয়মিত যাত্রীরা জানান, ফেরির পল্টুন থেকে আমাদের মোটরসাইকেল নিয়ে খেয়ায় উঠতে হয়। অনেক সময় ঘাটে থাকা ফেরির ওপর থেকেও ওঠা-নামা করতে হয় আমাদের। এতে মোটরসাইকেল স্লিপ করে নদীতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সড়ক ও জনপথের যে ফেরির ঘাট আছে এখান থেকে যাত্রীরা খেয়ায় ওঠা-নামা করে। এ কারণে যখন ফেরিতে গাড়ি ওঠা-নামা করে তখন খেয়ার যাত্রীরাও একই পথে চলাচল করায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। বর্তমানে এখানে একটি যাত্রী ছাউনি থেকেও না থাকার মত অবস্থায় রয়েছে। জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত যাত্রী ছাউনিটি পুনরায় সংস্কার করে বসার ব্যবস্থা করলে খেয়া পার হতে আসা যাত্রীদের সুবিধা হবে।
ভোগান্তি নিয়ে খেয়ার যাত্রী রশিদ বিন সুমন বলেন, 'আমাদের অনেক কষ্ট করে খেয়ায় উঠতে হয়। ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। অথচ সরকার প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব পায়। কিন্তু যাত্রী সেবার কোনো উন্নয়ন নেই।'
আরেক যাত্রী মো. জলিল বলেন, 'বর্ষাকালে ফেরিঘাটের পল্টুনের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, বৃষ্টির পানিতে ভিজতে হয়, অনেক কষ্ট হয়। খেয়াঘাট না থাকায় ফেরির পল্টুন দিয়ে খেয়ায় ওঠতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হয়।'
যাত্রী সজীব উল্লাহ বলেন, 'আমতলী ও পুরাকাটার খেয়া পারাপারে সাধারণ মানুষকে খুব ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর একমাত্র কারণ ফেরির গ্যাংওয়েতে খেয়াঘাট হওয়ায়। বিশেষ করে যখন ফেরি আসে তখন খুব সমস্যা হয়। বিগত দিনে খেয়ায় উঠতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে ।
বরগুনা থেকে খেয়ায় আমতলী যাতায়াতকারী মো. নাঈম বিল্লাহ বলেন, 'খেয়াঘাট ও যাত্রী ছাউনি না থাকায় আমাদের দুভোর্গের কোনো শেষ নাই।'
সরকারি চাকুরীজীবী ফারহানা চুমকি বলেন, 'প্রতিদিন সকালে খেয়ায় বরগুনা যেতে হয়। একদিকে যাত্রী ছাউনি না থাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজতে হয় আরেকদিকে খেয়াঘাট না থাকায় ফেরির পল্টুন দিয়ে খেয়ায় উঠতে হয়। ফেরি যখন আসে তখন খেয়ায় উঠতে প্রাণ হাতে নিয়ে উঠতে হয়।'
এই খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে একটি খেয়াঘাট ও যাত্রী ছাউনি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম মুঠোফোনে বলেন, 'বিষয়টি আমি জেলা উন্নয়ন সভায় উপস্থাপন করবো।'
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, 'খেয়া ঘাটটির উন্নয়নে কি কি কাজের প্রয়োজন তা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'