বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত ও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্ত চারটি চিকিৎসা পদ্ধতির একটি হলো-হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা। স্বীকৃত এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অধিক গ্রহণযোগ্য অ্যালোপ্যাথিক পদ্ধতি। বিনিয়োগসহ সহায়ক পরিবেশের কারণে এটিই প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিও রয়েছে। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অবহেলিত।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু রয়েছে। রামেকে প্রায় দুই দশকের ব্যবধানে এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগী বেড়েছে আটগুণ। যেটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সুযোগ-সুবিধা ও জনবল বাড়লে জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে, বলছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।
রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ২০০০ সালে হাসপাতালের বহির্বিভাগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করা হয়। প্রথমে কয়েক দিন চিকিৎসা দেওয়া হলেও চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৫ সাল থেকে অব্যাহতভাবে বহির্বিভাগে হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একজন চিকিৎসকসহ মোট ৩ জন জনবল দিয়ে চলছে চিকিৎসা। হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের পাশের একটি রুমে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, যেখানে রোগীদের জন্য প্রায় শতভাগ ওষুধও দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের তথ্য বলছে, চালু হওয়ার প্রথম দিকে দিনে ৫ থেকে ১০ জন রোগী আসতো, যেটা এখন ন্যূনতম ৬০ থেকে ৮০ এর উপরে হচ্ছে। এখানে চিকিৎসা পরামর্শের পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধও মিলছে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় বছরে ৫ লাখ টাকার সরকারি ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে, বলেও জানা গেছে।
হাসপাতালের হোমিওপ্যাথিক ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য ওয়ার্ডের চেয়ে এখানে রোগীর চাপ কম। তবে একেবারে ফাঁকা থাকছে না। দু’একজন করে রোগী আসতেই থাকছেন। এছাড়া সকালের দিকে এই ওয়ার্ডের সামনে রোগীদের দীর্ঘ লাইনও দেখা গেছে।
ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে এই ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন গৃহবধু আফরোজা বেগম। তিনি জানান, তার বাচ্চার বয়স ৯ মাস। ছোট্ট বাচ্চার হোমিওপ্যাথি ওষুধ ভালো কাজ করে। এর আগেও দুইবার এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। গর্ভাবস্থায়ও নরমাল ডেলিভারির জন্য হোমিও চিকিৎসা নিয়েছিলেন, যা খুব ভালো ফল দিয়েছে।
আয়েশা বেগম (৫৯)। লাঠিতে ভর করে তিনিও এসেছেন চিকিৎসা নিতে। তিনি জানান, অ্যালোপ্যাথি ওষুধের অনেক দাম। এতো টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব না। তাই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে ফ্রিতে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়, যা ভালো কাজ করে।
রামেকের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার অফিসার ডা. মো. আতাউর রহমান জানান, এই ওয়ার্ডে তিনিই ২০০৫ সাল থেকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। রোগীদের ভালো সাড়া আছে। সময়ের সঙ্গে রোগীও বাড়ছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিটাকে সম্প্রসারিত করা হলে সাধারণ মানুষ স্বল্প খরচে ভালো চিকিৎসা পাবে।
তিনি জানান, একজন ডাক্তার হওয়ায় কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন-সাধারণ ও ক্রনিক ডিজিজের সকল রোগীকেই দেখতে হয়। আর রোগী বাড়তে থাকায় সময়ের বিষয়টাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ক্রনিক ডিজিজের রোগীদের যে সময়টা দেওয়া দরকার, সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে রোগীরা ভালো ফলাফল পাচ্ছে। সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত করা গেলে সেবার মান আরও বাড়বে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বহির্বিভাগের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সময়ের সঙ্গে জনপ্রিয় হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই ওই ওয়ার্ডে পরিদর্শনে গেলে ভালো রোগীও দেখা যায়। তার মানে, মানুষ সেখানে ভালো সেবা পাচ্ছে বলেই আসছে। এখন আপতত হোমিওপ্যাথি পদ্ধতির সম্প্রসারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন নির্দেশনা নেই। আর তাদের কোন পরিকল্পনা আছে কি না সেটাও জানানো হয়নি। এছাড়া আরও যে দুটি স্বীকৃত পদ্ধতি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক, তা নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের কি পরিকল্পনা আছে, সেটি জানালে বিস্তারিত জানানো যাবে।
আরএইচ/আরএন