একসঙ্গে এক মাঠে একই ফসল এবং শ্রমিক ছাড়াই মেশিনে জমির চাষাবাদ ও ধানের চারা রোপণ করে ফসল উৎপাদনকে বলা হয় ‘সমলয়’।
সোমবার ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২ নম্বর গৌরীপুর ইউনিয়নের শালিহর গ্রামে শালিহর ব্লকে সমলয়ে পদ্ধতিতে অর্ধশত কৃষকের একসঙ্গে জমি প্রস্তুতকরণ ও ধানের চারা রোপণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম. সাজ্জাদুল হাসান। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বোরো ধানের (উফশী জাত) সমলয়ে চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনীর আওতায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টর যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকার জানান, কৃষকরা একসঙ্গে একই ফসল করছে। মেশিনে জমি প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন মেশিন দিয়েই চারা রোপণ করা হচ্ছে। মেশিনে চারা রোপণ করায় চারা আঘাতপ্রাপ্ত হয় না। অতিরিক্ত নিচে বা উপরে ভেসে যায় না। নির্ধারিত দূরত্বে রোপণ করায় খাদ্যেও ভারসাম্য থাকে। একসঙ্গে ফসল করায় রোগ প্রতিরোধ সহজ হয়। এতে ফলন ভালো হয়।
রাইস ট্রান্সপ্লান্টরের চালক মো. এমদাদুল হক জানান, প্রতি এক একর জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে দূরত্ববিধি মেনে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। শ্রমিক দিয়ে এ জমিতে রোপণ করলে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা কৃষকের খরচ হতো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি। বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. আনিসুর রহমান, মো. রাকিবুল হাসান, উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. শরীফুল ইসলাম, সুখরঞ্জন দাস, সুমন চন্দ্র সরকার, মোক্তাদির হাসান, নাহিদা আক্তার, জাকিয়া জেসমিন, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, কৃষক চান্দেরসাটিয়ার এসএম ইমতিয়াজ হোসেন, শালিহরের মো. সিদ্দিকুর রহমান, মো. মানিক মিয়া, মুনসুর আলী, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
কৃষক মো. রুবেল মিয়া, আজহারুল ইসলাম ও আব্দুর রহিম জানান, ধান কাটা ও রোপণে এখন চরম শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টর মেশিনে চারা রোপণ করায় শ্রমিক খরচ ও সময় সাশ্রয় হয়েছে। ঘণ্টায় ৩০-৪০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ করে দিচ্ছে। সবদিক থেকে কৃষকদের বাঁচিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, প্রথমে রাইস ট্রের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়। পরে রাইস ট্রান্সপ্লান্টর যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এতে কৃষকের বিঘা প্রতি চারা রোপণ করতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগছে। মজুরি খরচও কম লাগবে। কৃষকরা অনেক উপকৃত হবে।
উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. শরীফুল ইসলাম জানান, সারিবদ্ধভাবে ট্রেতে সাজানো ধানের কচি চারা, দেখতে অনেকটা সবুজ কার্পেটের মতো মনে হলেও আসলে তা নয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণ না করে এ পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের ট্রেতে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে লাগানো হয় ধানের বীজ। এতে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা মাঠে লাগানোর উপযোগী হয়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ পদ্ধতিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে সামান্য জৈব সার ব্যবহারে খরচ কম হয়। প্লাস্টিকের ট্রে-তে বীজতলা করায় ধানের চারা উত্তোলন, রোপণ, ফসল মাড়াই ও সবই একযোগে করা যায়। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ ব্যবহার করায় ১৪০ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলা সম্ভব হয়। এতে ফলন বাড়বে, উৎপাদন খরচ কমবে। এ পদ্ধতিতে বিশেষ অটোমেটিক কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রে-তে চারা বপন করা হয়। ট্রে-তে চারা বপন যন্ত্রের ৩টি চেম্বার থাকে। প্রথম চেম্বারে মাটি দেওয়া হয়। দ্বিতীয় চেম্বারে অঙ্কুরিত বীজ দেওয়া হয়। সেই বীজও মেশিনের মাধ্যমে সঠিক পরিমাণে ট্রেতে পড়ে। তৃতীয় চেম্বারে আবারও মাটি দেওয়া হয়। সেই মাটিও মেশিনের মাধ্যমে বীজসহ ট্রে-তে পড়ে বীজ ঢেকে দেয়। এরপর ট্রেগুলো জমিতে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। ট্রেতে পানি স্প্রে করা হয়। শীতে চারার যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। চারার উচ্চতা ৪ ইঞ্চি বা চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিন হলে তা জমিতে রোপণ করার উপযোগী হয়।
এসআই/আরএন