Thursday | 20 March 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Thursday | 20 March 2025 | Epaper
BREAKING: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনী পাস      ঈদে সরকারি চাকরিজীবীদের টানা ৯ দিনের ছুটি      হাইকোর্টের বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণ      চালের দাম বেড়েছে      বোলিং অ্যাকশনে নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হলেন সাকিব      ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা, ১৬ হুথি সদস্য নিহত      রাজধানীতে শিশু ধর্ষণের মামলায় গৃহশিক্ষকের মৃত্যুদণ্ড      

রাজশাহীতে ৫ বছরে কমেছে ২ হাজার হেক্টর কৃষি জমি

Published : Monday, 3 February, 2025 at 7:13 PM  Count : 131

রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষি নির্ভর। সারাবছর ধান, গম, পাটসহ সবজি জাতীয় কোনো না কোনো ফসল উৎপাদন করেন তারা। এ উপজেলার সবজি চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়।

কিন্তু গত কয়েক বছরে ধরে উপজেলার যত্রতত্র ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে তিন ফসলি ও দুই ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর খনন শুরু করে প্রভাবশালীরা। কোনভাবেই ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এই উপজেলার ফসলি জমি। এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য দ্রব্যের সংকট দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে দুই থেকে আড়াই হাজার পুকুর খনন করেছে প্রভাবশালীরা। তবে উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সমীক্ষায় আগে এ উপজেলায় ছিল ৫ হাজার ৯৫০টি। বর্তমানে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার। মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সমীক্ষাতেই এ উপজেলাতে দুই থেকে আড়াইশ পুকুর বেড়েছে। কিন্তু এলাকাবাসী ও কৃষকদের দাবী, গত ৫ বছরে কয়েক হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। কিন্তু মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমীক্ষা স্থানীয়দের দাবির সঙ্গে আকাশ-পাতাল তফাত দেখা যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৎস্য চাষ লাভজনক হওয়ায় উপজেলাটিতে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা অব্যাহত রয়েছে। আর যত্রতত্র পুকুর কাটায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। আর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকেরা সময়মতো আবাদ করতে পারছেন না। এর ফলে গত পাঁচ বছরে প্রায় তিন থেকে চার হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমেছে এ উপজেলায়। এতে করে খাদ্য ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। আর প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কর্মকাণ্ড চললেও তা দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ কৃষকদের।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, এ বছর উপজেলায় কোন পুকুর খনন করা হচ্ছে না। দু’একটি এলাকা থেকে যে অভিযোগ আসছে সে বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জিন্নাত আলী জানান, তাদের আংরার বিলের আগে বছরে তিনটি ফসল হতো। এখন তারা একটি ফসলও ঠিকমতো তুলতে পারছেন না। কারণ বিলের ভেতর পুকুর খনন করায় জলাবদ্ধতার কারণে পানি এসে ফসল ডুবিয়ে দেয়। আবার জলাবদ্ধতার কারণে শত শত বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় ফসল করা সম্ভব হচ্ছে না। বিলে যাদের বেশি জমি রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রভাবশালীরা পুকুর কাটছে। কিন্তু আমাদের মতো কৃষকের জমি অল্প, এ কারণে আমরা প্রভাবশালীদের সঙ্গে পেরে উঠছি না। আবার প্রশাসনকে জানালে তাৎক্ষণিক বন্ধ হলেও স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে না।

একই গ্রামের মন্টু আলী নামের আরেক কৃষক জানান, তাঁর জমিটি অন্য একজনের পুকুরের পাশে। অন্য জমির মালিক তাদের জমিতে পুকুর কেটেছেন। কিন্তু দুই পুকুরের মাঝখানে তার অল্প জমি থাকায় চরম বিপদে পড়েছেন। কারণে বোরো মৌসুমে ধানের জমিতে পানি-সেচ দিলেও পানি পুকুরে চলে যাচ্ছে।

ওই এলাকার কৃষকরা জানান, যেভাবে পুকুর কাটা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে কিছুকাল পরেই দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে। পুকুর কাটার কারণে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে তাতে তারা ঠিকমতো আবাদ করতে পারছেন না। আর যদি আবাদ না হয় তাহলে তো শতভাগ খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবেই। বর্তমানে তিন ফসলি জমিতে প্রচুর পুকুর কাটা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জানালে তারা এসে ভেকুর ব্যাটারি নিয়ে যাচ্ছে। এতে দু’একদিনের জন্য খনন বন্ধ হলেও স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে না। এই খনন যদি বন্ধ না হয় তাহলে ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে কৃষকসহ সবারই ক্ষতি হবে। তাই প্রশাসনের স্থায়ীভাবে পুকুর খনন বন্ধ করা প্রয়োজন। এছাড়াও পুকুর খনন বন্ধের প্রতিবাদ করলে তারা ভয়ভীতি দেখায় ও হুমকি দেয়।

দুর্গাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) তানজিমুল ইসলাম জানান, দুর্গাপুরে মৎস্য চাষে অত্যন্ত সমৃদ্ধ উপজেলা। এখানকার পুকুরগুলোর কার্প জাতীয় মাছের চাষ বেশি হয়। এছাড়া, ফসলের চেয়ে মাছে বেশ লাভ হওয়ায় কৃষকরা নিজেদের জমিতে পুকুর কাটছেন। এ কারণে আমরা চাইলের পুকুর কাটা তেমন একটা বন্ধ করতে পারছি না।

তিনি আরো বলেন, পাঁচ বছর আগে পুকুরের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৯০০। বর্তমানে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ১৫০টি। এ উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। আবার ফসল বিক্রিতে বেগ পেতে হলেও মাছ বিক্রিতে চাষিদের বেগ পেতে হয় না। অন্যান্য চাষের সাথে তুলনা করলে মাছ চাষ খুব লাভজনক। কিন্তু পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের দিকে খেয়াল রেখে কৃষকদের তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটা থেকে বিরত থাকার আহ্বান ওই কর্মকর্তার।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানারা পারভীন লাবনী উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কৃষি বিভাগের এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কীভাবে অল্প জমিতে অধিক ফসল ফলানো যায়।  ভালো জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত জাতগুলোর ব্যবহার কীভাবে করা যায় কৃষি বিভাগ সে ব্যাপারে কৃষকের পাশে থেকে কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর রাস্তা-ঘাট, ঘড়-বাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা ও পুকুর কাটায় আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। দকে ভালো জমিতে বিশেষ করে তিন ফসলি ও দুই ফসলি জমিতে কেউ যাতে পুকুর খনন করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি। গত পাঁচ বছরে উপজেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমে গেছে। কৃষি বিভাগ আবাদি জমির রক্ষার বিষয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আরএইচএফ/এসআর
Related topic   Subject:  রাজশাহী   দুর্গাপুর  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close