Saturday | 8 February 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
Saturday | 8 February 2025 | Epaper
BREAKING: এবারও শিরোপা বরিশালের ঘরে, গড়লো ইতিহাস      বিএনপি ক্ষমতায় এলে কৃষকের মুখে হাসি থাকবে: কৃষিবিদ তুহিন      বয়স্কদের ছাড় দিয়ে তরুণদের নেতৃত্বই মানতে হবে: সিনিয়র সচিব      শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে সন্ত্রাসীদের সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন: প্রধান উপদেষ্টা      জাতীয় নির্বাচন বছরের শেষ দিকে হতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা      যমুনা সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন      ৩ দিনের মধ্যে ইস্যু না হলে উড়োজাহাজের বুকিং টিকিট বাতিল      

গারো পাহাড়ে অবৈধ বালু লুটপাটের মহোৎসব

Published : Tuesday, 4 February, 2025 at 3:33 PM  Count : 62

শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ি সীমান্তের নদী-নালা, খাল-ঝর্ণা, ফসলি জমি, জলাশয়, বন বিভাগের পাহাড় ও নদীর পাড় ভেঙে নির্বিচারে চলছে বালু লুটের মহোৎসব। এতে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য বিলীন হয়ে ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। 

জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষে অবস্থিত পাহাড়ের পাদদেশে অপূর্ব সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি প্রাকৃতিক খনিজ ও বনজ সম্পদে ভরপুর শেরপুরের গারো পাহাড়। এই সৌন্দর্যকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র, নালিতাবাড়ির মধুটিলা ইকোপার্ক ও পানিহাতা পর্যটন কেন্দ্র। এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে গারো পাহাড়। 

সৌন্দর্য উপভোগ করতেই দর্শনার্থীদের এই এলাকায় আগমন ঘটে তাদের। এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলো থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে। কিন্তু এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোর আশপাশের এলাকায় স্থানীয় বালুদস্যুরা নালিতাবাড়ীর ভোগাই, চেল্লাখালী ও ঝিনাইগাতীর মহারশি, সোমেশ্বরী, কর্ণঝোড়া ও কালঘোষা নদীসহ বিভিন্ন স্থানে শত  শত মিনি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পরিবেশের ভারসাম্যের ক্ষতি সাধন করে অবাধে বালু লুটপাট করে আসছে। এতো সৌন্দর্য হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। 

এদিকে, নদী থেকে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি গারো পাহাড়ি গোপে মিনি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গভীর গর্ত করে চলছে সাদা বালু উত্তোলন। এতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এসব বালু লুটপাটের বিষয়টি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হচ্ছে। নদীর পাড়ের ফসলি জমি, বন বিভাগের পাহাড় কেটে নির্বিচারে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করা হচ্ছে। উত্তোলনকৃত বালু দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন ও বিক্রি করা হচ্ছে। বালুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই এখন বালু লুটপাটের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। 

বালু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি ট্রাক বালু ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। গত বছর যে বালু বিক্রি করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। বর্তমানে গত বছরের চেয়ে ৫ গুন বেশি দামে বালু বিক্রি হচ্ছে। 
বালুর দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানা গেছে, মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ওই নদীর বালু বন্ধ থাকায় শেরপুরের গারো পাহাড়ের বালুর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই অধিক অর্থের লোভে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলনে জড়িয়ে পড়েছেন অনেকেই।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, গত বছরের ০৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দল বেঁধে এসব এলাকায় অবাধে বালু উত্তোলন শুরু করে এক শ্রেণির অসাধু চক্র। গত কয়েক মাসে বালু লুটপাট করে গারো পাহাড়ের অনেকেই কোটিপতি বনে গেছেন। 

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, জেলার নদীগুলোর ইজারাকৃত নির্ধারিত স্থানে এক/দুই মাস বালু উত্তোলনের পর সেখানে আর বালু থাকে না। পরে বালুখেকোরা সারা বছর ইজারা বহির্ভূত এলাকায় বালু লুটপাট করেন।

অভিযোগ রয়েছে, বালুখেকোরা গায়ের জোড়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দিনে রাতে কোটি টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করে আসছে। বর্তমানে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর থেকে শুরু করে ঝিনাইগাতী উপজেলার কর্ণঝোড়া সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় ও জেলা সদরসহ বিভিন্ন হাটবাজার গ্রামগঞ্জে,পাড়া মহল্লায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে এমনকি বাড়ির সামনে বসানো হয়েছে অবৈধ বালুর হাট। এসব স্থান থেকে প্রকাশ্যে বাঁধাহীন ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে বালু। 

বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় বালু লুটপাটের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে বা প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর নেমে আসে বালুদস্যুদের কালো থাবা। বালু লুটপাট প্রতিরোধে অভিযান করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে আওয়ামী লীগের দোসর খেতাবে ভূষিত হচ্ছেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা। 

জানা গেছে, গত ০৫ অগাস্টের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা প্রশাসনের কাজের অংশ হিসেবে বালু লুটপাট বন্ধের দিকে অবস্থান নেন। তাকে প্রায় প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাতে হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, তাকে কোনো ভাবে দমাতে না পেরে বালুখেকোরা নানা অজুহাতে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে মাঠে নামে। একপর্যায়ে বদলি হতে হয় তাকে। অবৈধ বালুর গাড়ি আটক করে আওয়ামী লীগের দোসর খেতাব পান ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেলসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক। 

গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ঝিনাইগাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) অনিন্দা রানী ভৌমিক উপজেলা সদরের বিভিন্নস্থানে অবৈধ বালুর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় অবৈধ বালু ভর্তি একটি গাড়ি আটকসহ চার শ্রমিককে ১০ দিনের করে কারাদণ্ড দেন। এ ঘটনায় বালুদস্যুরা উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে সাজাপ্রাপ্ত শ্রমিকদের ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। 

ময়মনসিংহ বন বিভাগের নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বন এলাকা থেকে বালু লুটপাট বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা হুমকি ধমকির মধ্যে রয়েছি।'

ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ফরেষ্ট রেঞ্জে কর্মরত সহকারি বন সংরক্ষক এসডি মো. তানভীর আহমেদ ইমন বলেন, 'লোকবলের অভাবে ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বন এলাকা থেকে পাথর ও বালু লুটপাট বন্ধ করতে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে লোকবল বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।'

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৫ বছরও এমন বালু লুটপাট করা হয় ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে। তবে সে সময় শুধু নদীতেই সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে নতুন করে অসংখ্য বালু ব্যবসায়ী ও বালু মহালের আবির্ভাব ঘটেছে। থেমে নেই বেপরোয়া ভাবে বালু লুটপাট। এসব বালুদস্যুদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে জেলার নদী, নদীর পাড়ের ঘর-বাড়ি ও নদীর উপর নির্মিত ব্রিজ। একইসঙ্গে হুমকিতে পড়েছে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য। 

তাই এলাকাবাসীর দাবি, পরিবেশের ভারসাম্যের কথা বিবেচনা করে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে জীববৈচিত্র্য ও নদী রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এমএ
Related topic   Subject:  শেরপুর   গারো পাহাড়   বালু   


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close