যশোরের মনিরামপুরে মহাসড়ক সংলগ্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্বেগ-আতংক দেখা দিয়েছে। গত দেড় মাসের ব্যবধানে উপজেলায় ১৫ জনের প্রাণ গেছে। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশত। এই উৎকন্ঠা-আতংকের শেষ কোথায়? এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক সহ সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, রাজারহাট-চুকনগর মহাসড়কের মনিরামপুর অংশের শুরু কুয়াদা বাজার এবং শেষ ফকিররাস্তা বাজার। এরমধ্যে কুয়াদাহ স্কুল এন্ড কলেজ, টুনিয়াঘরা মহিলা আলিম মাদ্রাসা, সিটিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনিরামপুর সরকারি কলেজ, প্রতিভা বিদ্যানিকেতন, মনিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মনিরামপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, কমপক্ষে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই মহাসড়ক লাগোয়া। গত দেড়মাসের ব্যবধানে এই মাহসড়ক লাগোয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে কমপক্ষে ২০টির অধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থীসহ ৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
গত ২২ জানুয়ারি একটি পিকআপ সুন্দলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকা ইজিবাইককে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই চালক আব্দুল মজিদ নিহত হন। এ ঘটনার কয়েকদিন আগে গত ১১ ডিসেম্বর ওই বিদ্যালয়ের সামনে প্রায় একই জায়গায় ট্রাক চাপায় রিক্তা পারভীন নামের এক গৃহবধূ নিহত হন। এ দুর্ঘটনার কয়েকদিন আগে ওই বিদ্যালয়ের মাত্র কয়েকগজ দূরে পিকআপ-মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে কলেজ শিক্ষার্থী ফারজানা ইয়াসমিন রিমি ও মারুফ হোসেন নিহত হন। গত ১৫ ডিসেম্বর মহাসড়ক লাগোয়া সিটিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখী সংঘর্ষে তিন আরোহীর মধ্যে আসাবুর রহমান (১৭) নামের এক স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও হাফিজুর রহমান (৫৫) নিহত হন। সর্বশেষ গত ২৮ জানুয়ারি এই মহাসড়ক লাগোয়া বাধাঁঘাট সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ট্রাকচাপায় ভ্যানযাত্রী রূপা খাতুন (৪২) ও ভ্যান চালক মোসলেম উদ্দীন (৫৫) ঘটনাস্থলে নিহত হন।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। আতংকিত অভিভাবকরা তার সন্তানদের বিদ্যালয় হতে নিয়ে অন্যত্র ভর্তি করছেন।
এ ব্যাপারে সুন্দলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানা জানান, রাস্তা পার হয়ে আসতে হয় বলে এমনিতেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম। তারওপর একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসছে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাস্তা পারের অভয় দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ইতোমধ্যে কয়েকজন অভিভাবক তাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন।
অভিভাবক মোহাম্মদ বাবুল আখতার বলেন, সড়কে যে হারে দুর্ঘটনা বেড়েছে; তাতে সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত চিন্তায় থাকতে হয়।
জানতে চাইলে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে এ উপজেলা চরম দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠেছে। এ কারণে সড়কে বেপরোয়া গতিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ সড়কে আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোরতা প্রদর্শনের বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।
এসআর