সারাদেশের ন্যায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় চলছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট। পাইকারি ও খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এদিকে, খুচরা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০-১৯২ টাকা লিটার দরে।
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ভাজাপোড়া খাওয়া বাড়ে সেই সাথে বাজারগুলোতে তেলের এই সংকটে দুই/একজনের হাতে বোতলজাত সয়াবিন তেল থাকলেও বেশির ভাগ মানুষ কিনছেন খোলা সয়াবিন তেল।
রোববার সরেজমিনে বাজার ঘুরে পাইকারি মহাজন ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পাওয়া গেছে অভিনব তথ্য।
জানা যায়, পুষ্টি সয়াবিন তেলের বোতলজাত তেল দোকানে দেওয়া হলেও শর্ত রয়েছে পুষ্টি আটা, সুজি, লবন, ট্যাংক, পোলাও চালসহ প্রায় পাঁচ পদের মালামাল কিনতে হচ্ছে দোকানীর। ফলে ক্রেতা ধরে রাখতে একটু বেশি সদাই কিনলেই কেবল দেওয়া হচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল।
অপরদিকে, রুপচাঁদা তেল কিনতে কোম্পানি সাথে দিচ্ছে পোলাও চাল। দোকানদাররা বলছেন, রুপচাঁদা পোলাও'র চাল তেমন একটা না চললেও দোকান চালাতে নিতে হয়।
সাহা এন্টারপ্রাইজের পাইকারি বিক্রেতা বলেন, রুপচাঁদা তেল ২০ কার্টুন অর্ডার দিয়েছি সাথে তারা ১৫০ কেজি পোলাও'র চাল দেবে। পুষ্টি সয়াবিন তেলের প্রতি কার্টুনে এক বস্তা আটা নিতে হয়। আমার কয়েকশো কেজি পোলাও'র চাল জমা হয়েছে এগুলোর কি হবে জানি না। তবে এগুলো না নিলে বোতলজাত সয়াবিন মিলছে না। ক্রেতা ধরে রাখতে আমরা এগুলো কিনছি।
আরেক ব্যাবসায়ী বলেন, ফ্রেস সয়াবিন তেল কিনলে আটা, সুজি, লবনসহ প্রায় আট রকমের পণ্য কিনতে হচ্ছে। এখন যারা পণ্য কিনছেন তারা একই কোম্পানির সব ধরনের পণ্যে কিনছেন না। ফলে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।
এমন সংকটের জন্য বোতলজাত সয়াবিন তেলের ডিলার এবং কোম্পানিকে দোষারোপ করছেন দোকানি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, তেলের সঙ্গে একই কোম্পানির সরিষার তৈল, লবন, চা পাতা, সেমাই, ট্যাংক, পোলাও চাল, সুজি, হলুদ ও মসলা না নিলে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল।
কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা তাদের যেসব পণ্যের চাহিদা বাজারে নেই, সেসব পণ্য না রাখলে তেল দিচ্ছেন না। এমনকি সয়াবিন তেল বিক্রিতে কোনো ধরনের মুনাফা দিতেও রাজি নন তারা। এ জন্য দোকানে তেল রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তেল না পেয়ে ভোগান্তির কথা জানিয়ে উপজেলার মৃধা ডাঙা গ্রামের লোকমান হোসেন বলেন, 'অন্তত ছয়টি দোকান ঘুরেছি। কোনো দোকানে তেল নেই। সবাই বলছেন, নেই-নেই। এটা তো আমাদের জন্য ভোগান্তি। দোকানিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, কারণ কারও দোকানেই তেল নেই। এতে অনেক ক্রেতা মনে করছেন সংকট। তবে বাস্তবে কোম্পানির বেঁধে দেওয়া শর্তের কারণে তেল রাখছেন না দোকানিরা।'
বোতলের গায়ে লেখা দামে তেল বিক্রি করতে আমরা রাজি উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, 'কারণ মাসিক যারা ক্রেতা আছেন, তাদের সব মালামাল দিতে হয়। তা না হলে প্রতিযোগিতার বাজারে অন্য দোকানে চলে গেলে ক্রেতা হারাতে হয়। ফলে তেল বিক্রিতে লাভ না থাকলেও আমরা রাখতাম। কিন্তু এখন যেসব শর্ত দিচ্ছে কোম্পানিগুলো, তা কোনো ভাবেই মানা সম্ভব না হওয়ায় তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছি।'
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'সয়াবিন তেলের সাথে অন্যান্য পণ্য বাধ্যতামূলক দেওয়া এটি নিয়মবহির্ভূত কাজ, যারা এই কাজের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আমরা খুব শীঘ্রই বাজারে অভিযান পরিচালনা করবো।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান বলেন, 'ব্যাপারটা শুনেছি তেলের সাথে মসলা, পোলাও চাল এবং আটা নিতে হবে। এটা নিঃসন্দেহে অন্যায়। ব্যাপারটা কোম্পানি পর্যায়ে হলে মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেবে আর স্থানীয় পর্যায়ে আমরা ব্যবস্থা নেবো। তবে দুই/একদিনের মধ্যেই বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এসআই/এমএ