হরিণের রাজ্য হিসেবে পরিচিত ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা। হরিণ দেখতে প্রতিবছরই সবসময় দেশ-বিদেশ থেকে এখানে ছুটে আসতেন বিভিন্ন বয়সী পর্যটক। এই দ্বীপে শুধু বনে নয়, রাস্তা-ঘাট ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ির উঠানে অবাধে বিচরণ করতো মায়াবী হরিণ। সেই দৃশ্য নিজের চোখে দেখতে ছুটে আসতো পর্যটক।
বর্তমানে সংঘবদ্ধ হরিণ শিকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে বিলুপ্তির পথে মায়াবি হরিণ। এখন আর পথে-ঘাটে ও মানুষের বাড়ির উঠানে চোখে পড়ে না মায়াবি হরিণ। তাই হরিণের দেশ খ্যাত এই দ্বীপে পর্যটক আসা কমে গেছে।
হরিণ শিকারীদের সাথে স্থানীয় বনবিভাগের সখ্যতা ও উদাসীনতার কারণে এই দ্বীপে হরিণের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়াও বনবিভাগের সহযোগিতায় প্রভাবশালীমহল সংরক্ষিত বনাঞ্চল কেটে উজাড় করায়, হরিণের আবাসভূমি কমে যাওয়ায় হরিণের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে জানায় বাসিন্দারা।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ বছর পূর্বে হাজিরহাট ইউনিয়নের জংলারখাল, বদনারচর, চরশামসুদ্দিন, বইশার চর, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের আলম বাজার সংলগ্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল, লতাখালী সংরক্ষিত বনাঞ্চল, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের চরপিয়াল, রহমানপুর, কোড়ালিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও চরকলাতলী, ঢালচরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হরিণ ছাড়া হয় স্থানীয় বনবিভাগের উদ্যোগে। তারপর থেকে পর্যায়ক্রমে এই দ্বীপের প্রত্যেকটি বনাঞ্চলে মায়াবি হরিণের অবাধ বিচরণ বেড়ে যায়। এই সমস্ত বনে ২০ হাজারের বেশি মায়াবি হরিণ ছিল বলে জানায় বনবিভাগের কর্মকর্তারা। তবে কালের পরিক্রমায় ও শিকারিদের দৌরাত্ম্যে কমে যাচ্ছে হরিণ।
উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের আলম বাজার সংলগ্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশের বাসিন্দা রুবেল, কামাল সহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, ৪-৫ বছর আগেও বাজারের সামনের বনে অনেক হরিণ ছিল। প্রায় সময়ই খাবারের খোঁজে হরিণ দলবেঁধে রাস্তায় চলে আসতো। এছাড়াও হরিণ ছানা সহ রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে দৌড়াদৌড়ি করতো। হরিণের এই রকম বিচরণ দেখতে বহু পর্যটক এখানে বসে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এখন আর হরিণ দেখা যায় না, তাই পর্যটক আসে না আর এই দ্বীপে।
রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডী থেকে নাহিদ, সাফায়াত ও সাভার থেকে ইসমাইল ও রাসেদ মনপুরায় ঘুরতে আসা পর্যটক জানান, মনপুরায় হরিণের অনেক গল্প শুনে তারা নিজ চোখে দেখতে মনপুরায় এসেছেন। গত দুইদিন অতিবাহিত হলেও এখানো হরিণের দেখতে পারেননি। হরিণ দেখার অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে ফিরে যাবেন বলে জানান তারা।
উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের জসিম, শাহাবুদ্দিন ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকিব ও জামাল জানান, গত আওয়ামী লীগ আমলে হরিণ শিকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে বনের হরিণ বিলুপ্তির পথে। এছাড়াও ওই সময়ে মিঠা পানির খোঁজে বনের হরিণ লোকালয়ে আসলে তা স্থানীয় নেতারা ধরে জবাই করে মাংস ভাগ করে নিতেন। এছাড়াও নদী ভাঙ্গন ও বন উজারের কারণে হরিণের আবাসস্থল কমে যাচ্ছে। তাই এই দ্বীপে হরিণ বিলুপ্তির পথে।
এই ব্যাপারে বনবিভাগের মনপুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বনপ্রহরীরা সর্তক রয়েছে। হরিণ শিকারীদের বিরুদ্ধে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে তিনি হরিণের সংখ্যা কমে যাচ্ছে কেন এমন প্রশ্নে তিনি কোন উত্তর দেননি।
এই ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসান কবির জানান, শুনেছি এখানকার বনে এক সময় প্রচুর হরিণের বিচরণ ছিল। তা দেখতে পর্যটক আসতো। এখন হরিণের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পর্যটক আসছে না। বনে হরিণের সংখ্যা কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে বনবিভাগের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হরিণ শিকারীদের ধরতে বনবিভাগের পাশাপাশি পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এসআর