নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেশকাতুর রহমানের বিরুদ্ধে বন্যা দূর্গতদের চাল আত্মসাৎ করে কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বন্যা দূর্গতদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল যথাসময়ে বিলি না করে খাদ্য গুদামে রেখে কয়েক দফায় বিপুল চাল কালোবাজারে বিক্রি করার পর বিষয়টি জানাজানি হলে ২৩ মে. টন চাল গুদামে আটকা পড়ে। পরে এই চাল বিধি বহির্ভূত ভাবে ভিন্ন প্রকল্পে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নোয়াখালী জেলা ত্রাণ কর্তকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্য সামগ্রী অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকায় সোনাইমুড়ী উপজেলা থেকে উপস্থাপিত প্রস্তাব নাকোচ করে দেওয়া হয়েছে।'
বন্যা দূর্গতদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল কালোবাজারে বিক্রির বিষয়ে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহম্মেদ মুঠোফোনে ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'আমি ইতিমধ্যে ঘটনা তদন্ত করার জন্য জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে মৌখিক ভাবে নির্দেশ দিয়েছি।'
ঘটনার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো মহল থেকে ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে পিআইও মেশকাতুর রহমানের নিকট থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এক কর্মচারী মোটা টাকার নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে অতিবৃষ্টির ফলে নোয়াখালী জেলাজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ সময় সোনাইমুড়ী উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভার সকল মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। দীর্ঘমেয়াদী এই বন্যায় জরুরী ত্রাণ সহায়তা হিসেবে উপজেলায় ৫৩০ মে. টন চাল, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য, গো খাদ্য বাবদ প্রায় ৮ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা নগদ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এ সকল বরাদ্ধ দেওয়া হলেও বিলি বন্টন করার দায়িত্বে ছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেশকাতুর রহমান।
এছাড়া, ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে জরুরী ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয় যা উপজেলা দুর্যোগ প্রতিরোধ কমিটির সাথে সমন্বয় করে বিলি করা হয়। সরকারি ভাবে প্রাপ্ত চালের মধ্যে ১০ মে. টন চাল সাবেক অফিস সহকারী আজিজুল হককে কাগজে কলমে সভাপতি করে জোর করে স্বাক্ষর আদায় করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। সর্বশেষ ২২ সেপ্টেম্বর আজিজুল হকের নামে ডিও করে ৩ মে. টন চাল স্থানীয় এক ডিলারের নিকট বিক্রির চেষ্টা করা হয়। বন্যায় জরুরী ত্রাণ সহায়তার ৩০ মে. টন বিলি না করে বেআইনী ভাবে গুদামে রেখে দেন। যা বর্তমানে সোনাইমুড়ী খাদ্য গুদামে রক্ষিত রয়েছে।
সাবেক অফিস সহকারী আজিজুল হককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি শুধু স্বাক্ষরের মালিক বাকি আর কোনো কাজে আমাকে ব্যবহার করা হয়নি।'
এ সকল বিষয়ে পিআইও মেশকাতুর রহমান বলেন, 'ত্রাণের চাল বিতরণে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেতে করা হয়।'
এনএইচ/এমএ