মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ চট্টগ্রামবাসী। মশার উপদ্রবে মানুষ থাকতে পারছে না বাসা কিংবা অফিস-আদালতে। শুধু রাতে নয়, সারাদিনই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নানা উদ্যোগ নিলেও তাতে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, মশার উপদ্রবে কয়েল জ্বালিয়ে ও মশারি টাঙিয়েও থাকা যাচ্ছে না। এমনকি মশা নিরোধক মলম মসকুইটো রিপেলেন্ট ‘ওডোমস’ ক্রিম ব্যবহার করেও উপদ্রব থেকে বাঁচতে পারছে না নগরীর বাসিন্দারা। স্বাভাবিকভাবে রাতে মশার উপদ্রব বাড়লেও এখন দিনের বেলাও মশার উপদ্রবে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। সন্ধ্যা হলে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। এতো পরিমাণ মশা বাড়ছে বাচ্চারা পড়তে বসতেও পারছে না। মশারির ভেতরে বসে পড়তে হচ্ছে। এতে বাচ্চাদের পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (সিসিসি) মশক নিধন শ্রমিকদের সকাল-বিকাল দু’বার মশক ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও মাসেও একবার তাদের দেখা মিলে না। মাসে-ছয় মাসে হঠাৎ তাদের দেখা যায়। তারা মূলত লোক দেখানো কাজ করার জন্য মূল সড়কের আশপাশের এলাকায় পরিচ্ছন্নতা ও মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালিত করে। কার্যত ওয়ার্ডের অলি-গলিতে মশকনিধন কার্য়ক্রম চালাতে তেমন দেখা যায় না। এছাড়া নগরের এমন কিছু ওয়ার্ড আছে যেখানে এক বছরে একবারও মশক ওষুধ ছিটাতে দেখে নাই এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (সিসিসি) ৪১ ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সংশ্লিষ্ট বিভাগ লোক দেখানো কিছু কাজ করে বাকি টাকা কৌশলে বিভিন্ন মশকনিধন ওষুধ ক্রয়ের নামে লুটপাট করেছে। এছাড়া মানহীন মশার ওষুধ কেনার কারণে ওই ওষুধে কাজ হচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মশকনিধন কর্মীরা সে ওষুধও নিয়ম মতো ছিটায় না।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, এবার মশকনিধন প্রকল্পের আওতায় ২৫ হাজার লিটার স্প্রে আমদানি করা হয়েছে। যা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের হাতে এসে পৌঁছবে। এছাড়া মশা নিধনের নতুন উদ্যোগের কথা বলছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ডেঙ্গুর লার্ভা নিধনে পরিবেশবান্ধব ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস গ্রুপের ‘বিটিআই’ প্রয়োগ করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি)।
জানা যায়, ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস গ্রুপের ’বিটিআই’ মূলত এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এটি ‘টার্গেট স্পেসিফিক’, অর্থাৎ এই ব্যাকটেরিয়া বিশেষভাবে লক্ষ করে শুধু মশা, ব্ল্যাকফ্লাই ও ছত্রাকের লার্ভাকে মারতে পারে। বিটিআই প্রয়োগ করা হলে মশার লার্ভা তা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে এর থেকে বের হওয়া টক্সিনের বিষক্রিয়ায় মশার মিড-গাট বা খাদ্যনালীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে লার্ভা মারা যায়। বিটিআই প্রয়োগের পর সাধারণত দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে এটি লার্ভাকে মেরে ফেলতে পারে বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৪১ ওয়ার্ডে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে প্রায় ২০০ জন মশক শ্রমিক। নিয়ম অনুযায়ী এসব শ্রমিক সকালে লার্ভা নিধনের জন্য ড্রেনে বা পানি জমে এমন জায়গায় ওষুধ ছিটাবে এবং বিকালে উড়ন্ত মশা মারতে ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটাবে। এভাবে প্রত্যেক এলাকায় প্রতিদিন সকাল-বিকাল এ কার্যক্রম করার কথা থাকলেও কালক্রমে চোখে পড়ে না মশকনিধন কর্মীদের।
নগরের কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা গত ছয় মাসের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কাউকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি। যার ফলে নগরের প্রত্যেক এলাকায় অতিরিক্ত হারে মশার উপদ্রব বেড়েছে। মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের ভয়ে ছেলে-মেয়েরা পড়তে বসতে পারছে না। মশকনিধন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো সরফুল ইসলাম মাহি দ্য ডেইলি অবজারভারকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকায় ১৬০০ নালা ও ৬৫টি খাল রয়েছে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় এসব নালা ও খালে নির্মাণ ও সংস্কার কাজ চলছে। যার কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে। যার ফলে আটকে থাকা ওই পানিতে মশার প্রজনন বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, এখন মশার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় উপদ্রব আরও বেশি বেড়েছে। প্রতিদিন আমাদের মশক নিধনের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া মশা নিধনের নতুন উদ্যোগ হিসেবে এই মাসের মধ্যে বিটিআই ট্রায়াল করা হবে। এতে কার্যত ফল আসলে আশাকরি এই মাসের মধ্যে মশার উপদ্রব রোধ করা সম্ভব হবে।
এসআর