হুদাইবিয়ার সন্ধি প্রথমে মুসলমানদের জন্য অসম্মানজনক মনে হলেও, এটি ছিল মহান আল্লাহ'র এক গভীর হিকমত ও ভবিষ্যৎ বিজয়ের পরিকল্পনা। আপাত দৃষ্টিতে কিছু শর্ত মুসলমানদের অসম্মানের মতো মনে হলেও পরবর্তীতে দেখা যায়, এই সন্ধির মাধ্যমেই ইসলামের বিস্তার দ্রুততর হয় এবং মক্কা বিজয়ের পথ সুগম হয়।
হিজরি ৬ষ্ঠ সালে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবারা ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু কুরাইশরা বাধা দেয়। দীর্ঘ আলোচনা শেষে এক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা মুসলমানদের পক্ষে আপাত দৃষ্টিতে দুর্বল মনে হয়েছিল।
সন্ধির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল-
১. মুসলমানরা সে বছর ওমরাহ করতে পারবে না তবে পরের বছর করতে পারবে।
২. ১০ বছরের জন্য যুদ্ধবিরতি থাকবে।
৩. যদি কোনো কুরাইশ ব্যক্তি মুসলমান হয়ে মদিনায় চলে আসে তবে তাকে ফেরত পাঠাতে হবে। কিন্তু কোনো মুসলমান মক্কায় চলে গেলে তাকে ফেরত দেওয়া হবে না।
এই শর্তগুলো দেখে অনেক সাহাবি কষ্ট পেলেন। হযরত উমর (রা.) কষ্ট প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কি সত্যের ওপর নেই? তাহলে কেন আমাদের নীচতা মেনে নিতে হবে?” কিন্তু রাসূল (সা.) জানতেন, এতে আল্লাহ'র পরিকল্পনা রয়েছে।
আল্লাহ বলেন-
"নিশ্চয়ই আমি তোমাকে স্পষ্ট বিজয় দান করেছি।" (সূরা আল-ফাতহ: ১)
এই সন্ধির ফলে- কুরাইশ ও মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হওয়ায় ইসলাম প্রচারের সুযোগ বাড়ে। মদিনায় ইসলামের ভিত্তি শক্তিশালী হয়, অসংখ্য মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে ইসলাম গ্রহণ করে। দুই বছরের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়। মক্কার অনেক নেতার মন নরম হয়ে যায়। ফলে পরে সহজেই মক্কা বিজয় সম্ভব হয়।
রাসূল (সা.) জানতেন, আপাত অসম্মান বা ক্ষতি ভবিষ্যতে বিজয় আনবে। চুক্তির দুই বছরের মাথায় মুসলমানরা এত শক্তিশালী হয়ে যায় যে, কুরাইশই সন্ধি ভঙ্গ করলে মুসলমানরা মক্কা বিজয় করে নেয়।
আল্লাহ বলেন, "এটি ছিল আল্লাহ'র পক্ষ থেকে এক সুস্পষ্ট বিজয়।" (সূরা আল-ফাতহ: ৩-৪)
হুদাইবিয়ার সন্ধি আমাদের শেখায়, জীবনের কিছু পরিস্থিতি আপাতত কঠিন মনে হলেও তাতে আল্লাহ'র হিকমত লুকিয়ে থাকে। ধৈর্য ও কৌশলের মাধ্যমে সত্যিকারের বিজয় আসে। মুসলমানদের উচিৎ সব পরিস্থিতিতে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা কারণ আল্লাহ'র পরিকল্পনাই সর্বোত্তম।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সত্য ও ধৈর্যের পথে থাকার তৌফিক দিন। আমিন।
এমএ