বছরের একটি মাস রমজান। এ মাসে রোজা রাখতে গিয়ে কখনো কখনো ভুল হয়ে যায়। তখন অনেকেই চিন্তায় থাকেন তার রোজা হবে কি হবে না? তবে তিনটি অবস্থায় রোজা ভঙ্গকারী বিষয়টি ঘটালেও রোজা ভাঙে না।
রোজার কথা ভুলে গেলে: যদি সাওমের কথা ভুলে যাওয়ার কারণে পানাহার করা হয়, তখন রোজা ভঙ্গ হয় না এবং রোজা পূর্ণ হতেও কোনো অসুবিধা হয় না। নবীজি (সা.) বলেছেন, যে রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করে সে যেন তার রোজা অব্যাহত রাখে কারণ তাকে আল্লাহ তাআলা পানাহার করিয়েছেন। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৫৫)।
রোজার বিষয়ে অজ্ঞ হয়ে গেলে: এর উদাহরণ হলো- যেমন কেউ ভাবল এখনো ফজরের ওয়াক্ত হয়নি- তাই সে সাহরি খেয়ে নিল। অথবা ভাবল সূর্য অস্ত গেছে- অথচ তা অস্ত যায়নি। অতএব সে ইফতার করল। এমন হলে তার রোজা ভঙ্গ হবে না- অটুট থাকবে। আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, নবীজির (সা.) যুগে এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে আমরা ইফতার করলাম। তারপর সূর্য দেখা গেল। (বুখারি, হাদিস: ১,৯৫৯)।
অথচ নবীজি (সা.) তাদের রোজা কাজা করতে বলেননি। যদি কাজা করা ওয়াজিব হতো তবে তিনি অবশ্যই কাজা করতে আদেশ দিতেন।
অনিচ্ছাকৃত পানাহার করলে: অনিচ্ছাকৃত পানাহার করলেও রোজা ভঙ্গ হবে না। অনিচ্ছাকৃত পানাহারের উদাহরণ হলো: কুলি করার সময় কারও গলার ভেতর পানি ভেতরে চলে গেল। এ- অবস্থায় রোজা ভাঙবে না, কেননা, সে পান করার ইচ্ছা করেনি। এমনি ভাবে কারও স্বপ্নদোষ হয়ে বীর্যপাত হলেও তার রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। কেননা, সে নিদ্রায় ছিল, ইচ্ছা করেনি। আল্লাহ-তাআলা বলেন, ‘তোমরা কোনো ভুল করলে কোনো অপরাধ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর ইচ্ছা করলে অপরাধ হবে। (সুরা আহযাব, আয়াত: ৫)
মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না। ধোঁয়া বা ধুলোবালি অনিচ্ছাকৃত ভাবে গলা বা পেটের ভেতর ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কারও গলায় মাছি ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না।’ (মুাসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৬/৩৪৯)
কাউকে ভুল করতে দেখলে করণীয়
যদি দেখা যায়, রমজানে দিনের বেলায় কেউ কিছু খাচ্ছে বা পান করছে, কিংবা কোনো জ্ঞাত ব্যক্তি দেখে যে, রোজাদার পানাহার করছে তখন তাকে সাওমের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে অন্যায় কাজ হতে দেখবে সে যেন হাত দ্বারা তা প্রতিরোধ করে। যদি সে এর সামর্থ্য না রাখে তবে যেন মুখ দ্বারা বাধা দেয়। যদি এরও সামর্থ্য না রাখে তবে অন্তর দ্বারা। (মুসলিম, হাদিস: ৪৯)
আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে রোজারত অবস্থায় পানাহার করা একটি অন্যায় কাজ। কিন্তু তার ভুলে যাওয়ার কারণে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত। কিন্তু যে দেখে বাধা না দেবে সে দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। অতএব রোজা পালনকারীকে কিছু খেতে দেখলে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে।
স্মরণ হলে করণীয়
স্মরণ হওয়ার পর রোজা পালনকারীর উচিত হবে তাড়াতাড়ি খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া। সে এ ভুলকে খাওয়া দাওয়া করার সুযোগ মনে করে তা যেন অব্যাহত না রাখে। যদি মুখে খাবার থাকে তবে তাড়াতাড়ি ফেলে দেবে। স্মরণ হওয়ার পর গিলে ফেলা বৈধ হবে না। নিজ ইচ্ছায় আবার খেলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কাজা করা জরুরি হবে। বমি হওয়ার কারণে রোজা নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে রোজা ভেঙে ফেললেও কাজা করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৬/১৫০)।