বরগুনার বেতাগীতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটি নিয়ে অভিযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। কমিটিতে ৪ জন মৃত ব্যক্তি, প্রবাসে বসবাসকারী, বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগে পদ-পদবীযুক্ত এমন একাধিক ব্যক্তিকে সদস্য করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিতর্কিত ব্যক্তিকে সংগঠনের সভাপতি ও একই ব্যক্তির নাম কমিটির দুই জায়গায় অন্তর্ভক্ত রয়েছে। পাশাপাশি কমিটিতে পছন্দের ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কাছে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল বরগুনা জেলার সভাপতি মো. ইউসুফ আলী মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদার স্বাক্ষরিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট বেতাগী উপজেলা শাখার কমিটি অনুমোদিত হয়। এই কমিটির সভাপতি হিসেবে মো. আলতাফ হোসেন দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি বরিশাল বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের উপদেষ্টা। তার ছেলে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য। তিনি বরিশালের ভোটার এবং তার শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়তার সুবাদে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সাথে তার পরিবারের ঘনিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে মো. শাহ আলমের নাম রয়েছে, যিনি ২০২৪ সালে মারা যান। একই ব্যক্তি হিসেবে কমিটির ৫ নং ক্রমিকে যুগ্ম সম্পাদকের পাশাপাশি ১৪ নং সদস্য হিসেবেও তার নাম অন্তর্ভক্ত রয়েছে। কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ. মালেক ২০২৩ সালে মৃত্যু বরণ করেন। কমিটির সহ-সভাপতি শরীফ আলা উদ্দীন খান দুলাল তিনিও মৃত। কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান তিনিও দির্ঘদিন যাবত অসুস্থ। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলা ফেরা করতে পারেন না। কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া স্থাীয়ভাবে আমেরিকায় বসবাস করেন এবং সেখানকার নাগরিক। কমিটির সদস্য বুদেব কর্মকার তিনি ভারত প্রবাসী ও সেখানেই বসবাস করেন। কমিটির সদস্য মো. আলতাফ হোসেন খান ইউনিয়ন আওয়মী লীগ নেতা ও বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিবিচিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওয়াব হোসেনের নয়নের বড় ভাই। তাছাড়াও আওয়ামী লীগে পদ-পদবী দখল এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঐ রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত এমন একাধিক সদস্যও রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনকে সহায়তাকারি হিসাবে গত ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের আমন্ত্রণে ও শীত মৌসুমে গরীব ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে কম্বল বিতরণেও তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনপ্রীতিরও অভিযোগ রয়েছে।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের বেতাগী উপজেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. সোবাহান মুন্সি বলেন, শুনেছি ওই কমিটিতে আমাকে দপ্তর সম্পাদক পদে নাম দেওয়া হয়েছে। কমিটি গঠনের আগে পিছে কোন সভা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। হলেও কোন সভায় আমাকে অদ্যাবধি ডাকা হয়নি। আমি কাউকে পছন্দ না করতে পারি কিন্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সে যেই দল ও মতের হোকনা কেন কাউকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। কারন দেশের জন্য সকলেরই আত্মত্যাগ রয়েছে।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের বেতাগী উপজেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ আগে পিছনে মানুষতো মারা যেতেই পারে। এ বিষয় নিয়ে তো কারো হাত নেই। ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে কমিটিতে ভুল-ত্রুটি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা মনে মনে যে কোন দলকে সমর্থন করতেই পারে সেটা তাদের অপরাধ নয়। আমি বঙ্গবন্ধু গবেষনা পরিষদে ছিলাম। তবে তা আগে। সেখানে এক বন্ধু জোড় পূর্বক নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।’
বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি মো. ইউসুফ আলী মৃধা বলেন, বেতাগী উপজেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটির বিষয়ে একটি অভিযোগ হাতে পেয়েছি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সভা করে সিদ্বান্ত নেওয়া হবে। আওয়ামী ঘরানার যদি কেউ থাকে তাদের বাদ দেওয়া হবে। আর মৃত ব্যক্তিদের নাম সংশোধন করে কমিটি পুণঃগঠন করা হবে।
এসআর