পটুয়াখালীর বাউফলে মাস না যেতেই স্র্রোতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ভাঙনরোধে ফেলা বালুভর্তি জিও ব্যাগ। দ্বিতীয় দফায় নদীতে ফেলা জিও ব্যাগ বিলীন হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়ন তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার নামে দফায় দফায় সরকারি অর্থ লুটপাটের মিশন চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকে নদী ভাঙন রোধে টেকসই প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছেন নাজিরপুর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া তীরের মানুষ। হাজার হাজার স্থানীয় লোকজন স্পটে একাধিকবার মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচিও পালন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট পতিত হাসিনা সরকারের সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার মো: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ২০১৯ সালের ১৮মে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম, সাবেক চিফ হুইপ আসম ফিরোজসহ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকতা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তারা নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে এবং হাসিনা সরকার ক্ষমতায় গেলে ভাঙন রোধে মেগা প্রকল্প গ্রহন করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন। এরপর মেগা প্রকল্পতো দূরের কথা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পর ২০১৯ সালে নিমদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষার জন্য ২০০ মিটার অংশে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু তৎকালিন সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লুটপাটের কারণে প্রকল্পের কাজের মান ভাল না হওয়ায় অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই নদীর অতল গভীরে হারিয়ে যায় ওই সময় ফেলা জিও ব্যাগগুলো। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে এলাকাবাসীর মধ্যে। বিক্ষুব্দ এলাকাবাসী ফের নদী ভাঙণ এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন। এ অবস্থায় ফের নতুন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এবার তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনের কবল থেকে উপজেলার ৭১নং নিমদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নিমদি লঞ্চঘাট সংলগ্ন ৭৪ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ স্থাপনের জন্য প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ২৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে দাদা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনষ্ট্রাকশন কোম্পানী নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। পরে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকল্পটি সাব কন্ট্রাক্ট নেন বাউফল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক শাহ মো. জবিরুল হক লিটু।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিডিউল না মেনেই প্রকল্প এলাকার ৭৪ মিটার অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। প্রযুক্তিগত স্পেসিফিকেশন না মানা, সিডিউলের চেয়ে কম সংখ্যক ব্যাগ ফেলা, স্তর অনুযায়ী না ফেলা, অনুমোদিত নকশা ও দিকনির্দেশনা উপেক্ষা করা, ব্যাগে বালু ভর্তি করে ভলিউম ও ওজন পরিমাপ না করা, ব্যাগের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বালির পরিমাণ কম দিয়ে সেলাই করা, নিম্ম মানের বালু ভর্তি করা ও ফ্লাট বোট বা ভাসমান প্লাটফর্ম ব্যবহার ছাড়াই জিও ব্যাগগুলো স্থাপণ করা হয়েছে। ফলে মাস না পেরোতেই জিও ব্যাগগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
নিমদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার মু. ইব্রাহিম, রুহুল আমিন, ধানদি এলাকার মো. আনছার ও কবির হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা বিশাল এলাকার মধ্যে দ্বিতীয় দফায় মাত্র ৭৪ মিটারে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। আগের মতো এবারও সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার একমাস না যেতেই তা প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। টেকসই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ না নিয়ে এভাবে দফায় দফায় সরকারি অর্থ হরিলুটের বিষয়টি মানা যায় না। ভাঙন রক্ষার নামে এ ধরনের প্রহসন বন্ধ না হলে এলাকাবাসী রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
তারা আরও বলেন, নাজিরপুর ইউনিয়নকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য আমরা অচিরেই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শাহ মো. জবিরুল হক লিটু সাংবাদিকদের বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওয়ার্ক অর্ডার কিনে নিয়ে আমি কাজটি করেছি। সিডিউল মেনেই কাজটি করা হয়েছে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা বলেন, ‘ক্যাটাগরি অনুয়ায়ি জরুরি ভিত্তিতে ৭৪ মিটারের কাজ ছিল। ডাম্পিং বস্তা ধরা ছিল ৬৬৭১টি। এ ধরণের কাজে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হয়। বরাদ্দ ছিল মাত্র ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমেল পরবর্তী পটুয়াখালী জেলায় জরুরী ভিত্তিতে কিছু কাজ হয়। প্রকল্পটি তারই অংশ। কাজ করতে গেলে ভুল-ত্রুটি হতে পারে। তবে কাজ হয়নি বা সিডিউল মেনে হয়নি আমি এরকম মনে করি না।
এএস/এসআর