বাজারে আলুর দাম না থাকায় এখন বিপাকে পড়েছেন মাদারীপুরের চাষীরা। অনেকেই ঋণ করে করেছিলেন গোল আলুর চাষ। কিন্তু এখন ন্যায্য দাম না পেয়ে ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুচিন্তায় তারা। তবে কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, এখন আলু মজুদ করে রাখলে পরে বাজারে লাভ জনক দামে বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের কর্ণপাড়া গ্রামের আলু চাষী ফজল হাওলাদার। এবছর সাড়ে ৩ লাখ টাকা ঋণ করে ৫ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের আলু চাষ করেছিলেন। জমি থেকে এখন তিনি আলু তুললেও বাজারে পাচ্ছেন না ন্যায্য দাম। তাই ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন তিনি।
ফজল হাওলাদার বলেন, ‘আলু চাষের খরচ আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এবার বেশি হয়েছে। প্রতিটি আলুর জমিতে ৫ থেকে ৭ টি করে বদলা খাটাতে হয়েছে। এতে আমার ৫ বিঘা জমিতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে আলুর বাজার মূল্য ১২ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। তাই নতুন আলু বাজারে সরবরাহ করলেও লোকসান গুনেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ আলু চাষ করতে আমি প্রায় ৩ লাখ টাকা ঋণ করেছি। সেই ঋণের টাকা এখন পরিশোধ করতে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছি।’
শুধু ফজল হাওলাদারই নন। আলু চাষ করে একই ধরনের বিপাকে পড়েছেন এই মাদারীপুরের ডাসারের একই ইউনিয়নের আলু চাষী কলিম খান ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম। মাঠ থেকে কৃষকরা এখন আলু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকলেও আলুর বাজারে পাইকারী বিক্রি করতে গিয়েই পড়ছেন বিপাকে। প্রতি বিঘা আলু উৎপাদনে গড়ে ৪০ হাজার টাকা খরচ করলেও বাজারে দাম কম থাকায় খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। লোকসানের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় আগামীতে আলু চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন অনেকেই।
কর্ণপাড়া গ্রামেরই আলু চাষী কলিম খান বলেন, ‘আমি এবছর প্রতি বিঘা জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে গোল আলু চাষ করেছি। গত এক সপ্তাহ ধরে জমি থেকে আলু তুলছি। কিন্তু বাজারে পাইকারী আলুর দাম কেজি প্রতি ১২ টাকাও দিতে চাচ্ছে না। তাছাড়া হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করবো, সেখানেও খরচ বেড়েছে। তাই আলু বিক্রি করা ছাড়া আমার কোন গতি নেই। কারণ আলু চাষ করতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণ করেছিলাম। এখন ঋণ পরিশোধের চাপে আছি। তাই বাধ্য হয়েই কম দামে জমি থেকেই আলু আড়তে বিক্রি করে দিচ্ছি। শুধু এরাই নন। একই চিত্র পুরো মাদারীপুর সদর, ডাসার, কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর উপজেলার আলু চাষীদের।
মাদারীপুর অর্থনীতি সমিতির সভাপতি রিপনচন্দ্র মল্লিক বলেন, ‘কৃষকরা আর্থিকভাবে লোকসান হয় এমন পণ্য উৎপাদন থেকে নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। তবে আবার অতি প্রয়োজনীয় পন্য উৎপাদন করে যাতে কৃষকরা লাভবান হতে পারে, সেউ প্রচেষ্টাও কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নিতে হবে।
কৃষকরা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে আলুর দাম শুরুতেই যদি বিশ টাকা কেজি পাওয়া যেত তাহলে ঋণের বোঝা সড়াতে তাদের বেগ পেতে হত না। আমি মনে করছি, সরকারকে সেউ উদ্যোগটিই গ্রহণ করা উচিত হবে। যাতে কোন ভাবেই যেন কৃষক ক্ষতি গ্রস্ত না হয়।’
আলু সংরক্ষণ করে বাজারে ভালো দাম উঠলে বিক্রির পরামর্শ দিয়ে মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, মাদারীপুর জেলায় আলুর চাষ খুব বেশি হয় না। কৃষি বিভাগের উৎসাহ ও পরামর্শে অনেক চাষীই মাদারীপুরে আলু চাষে শুরু করছেন। আলুর উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তবে ভালো দাম পেতে হলে কৃষকদের আলু কয়েক মাস সংরক্ষণ করার পরে বাজারে ভালো পাওয়া গেলে বিক্রি করলে লোকসনা হবে না।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২,৮৬০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। যার থেকে ৭৪,৯৮০ মেট্রিক আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এসআর