ঘনিয়ে আসছে ঈদুল ফিতর। জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের মার্কেট এবং শপিংমলগুলো। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, যা কখনো তীব্র যানজটে রূপ নিচ্ছে। থেমে থেমে চলছে গাড়ির চাকা, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক যান চলাচল, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কর্মক্ষম মানুষ এবং নষ্ট হচ্ছে সময়। সাধারণ মানুষজন ভোগান্তিতে পড়ছেন। মানুষের এই ভোগান্তি কমাতে যানজট নিরসনে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম। পুরো উপজেলায় প্রতিটি মোড়, চৌরাস্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিয়োগ দিয়েছেন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক। এর ফলে যানজট কমেছে এবং কিছুটা স্বস্তি নিয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করছেন মানুষজন।
উপজেলা প্রশাসনের লোগো সংবলিত হলুদ-টিয়া রঙের পোশাক পরিহিত এসব স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। নিয়োজিত সবাই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকার পার্শ্ববর্তী রূপগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা। এখানে গড়ে উঠেছে শতশত শিল্পকারখানা, পাইকারী বাজার, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কর্মসংস্থানের সুবিধা থাকায় স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ ভাসমান নাগরিক এখানে বসবাস করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এখানে ব্যবসা করতে আসে। এছাড়াও, এই উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা নির্মাণাধীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং গাজীপুর-মদনপুর বাইপাসের কাজ এবং উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কাঞ্চন ব্রিজ থেকে ডেমরা পর্যন্ত প্রশস্তকরণের কাজ চলছে।
একদিকে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলমান, আর বিকল্প রাস্তা না থাকায় যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে ঈদুল ফিতরকে ঘিরে জমে উঠেছে পাইকারী হাট-বাজারগুলো, আর দেশের সকল ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন মোকামে।
এছাড়াও, হাজার হাজার কারখানা শ্রমিকের সড়ক পারাপার, কখনো বেতন-ভাতার দাবিতে সড়কে আন্দোলন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যাত্রী উঠানামাসহ নানা কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এই যানজট উপজেলার বিভিন্ন শাখা রাস্তাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে, ফলে সাধারণ মানুষজন ভোগান্তিতে পড়ছেন।
স্বেচ্ছাসেবী সোহেল রানা জানান, রূপগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় প্রায় ষোলটি জেলার মানুষ এই উপজেলার উপর দিয়ে রাজধানী ঢাকার অভিমুখে যাতায়াত করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই যানজটে পড়তে হয়। প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় ও ভাসমান নাগরিকদের মোট জনসংখ্যা এবং ব্যবসায়িক গুরুত্বের দিক বিবেচনা করে এই উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
নিঃস্বার্থ সমাজকল্যাণ যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার ভুইয়া রিদ্বীন জানান, আমরা শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরা দায়িত্ব পালন করার ফলে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও গাড়িতে মালামাল উঠানো বন্ধ হয়েছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল করতে পারছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদকে ঘিরে শুধু যানজট ভোগান্তিই নয়, সড়কে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। স্বেচ্ছাসেবীদের ট্রাফিক দায়িত্ব পালনে যানজট নিরসনের পাশাপাশি এসব অপরাধও বন্ধ হয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় সহায়ক হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এবারের রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরের সময় ভোগান্তি ছাড়াই মানুষের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নিয়েছি। রমজানের প্রথম দিন থেকে ইদের দিন পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবীরা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করবে। তাদের অধিকাংশই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আশা করি, এবছর মানুষজন যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।
এসএম/আরএন