লাইলাতুল কদর অর্থ হলো সম্মানিত রাত, মর্যাদাপূর্ণ রাত। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল করেছি কদর (মর্যাদাপূর্ণ) রজনিতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় কদর রজনি কী মহিমান্বিত কদর রজনি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা হযরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এ শান্তির ধারা অব্যাহত থাকে উষার উদয় পর্যন্ত।’ (সূরা কদর, আয়াত : ১-৫)।
অর্থাৎ এ রাতে আল্লাহ তায়ালা অধিক সংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং সকাল না হওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে এক অনন্য শান্তি বিরাজ করে। তাই মুসলমানের কাছে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব অপরিসীম।
আল্লাহর রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলেছেন। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৭)।
এ হাদিসের আলোকে উলামায়ে কেরামদের কেউ একুশ, কেউ বাইশ, কেউ পঁচিশ, কেউ সাতাশ, কেউ বা আবার উনত্রিশ রমজানে লাইলাতুল কদর হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন। তবে সাতাশ রমজানে লাইলাতুল কদর হওয়ার পক্ষে একটি সূক্ষ্ম ও মজার ইঙ্গিত রয়েছে। তা হলো এই যে, আল্লাহ তায়ালা গোটা কুরআন শরিফের তিনটি জায়গায় লাইলাতুল কদর শব্দটি উল্লেখ করেছেন এবং লাইলাতুল কদর শব্দটিতে রয়েছে নয়টি অক্ষর। আর নয়কে যদি তিন দ্বারা গুণ করা হয়, তাহলে সাতাশ বেরিয়ে আসে। যার কারণে ধারণা করা হয় লাইলাতুল কদর সাতাশ রমজানে হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কোনো দলিল দ্বারা যেহেতু লাইলাতুল কদর নির্দিষ্ট নয় বরং রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে তালাশ করতে বলা হয়েছে সুতরাং সব মুসলমানের উচিত হলো লাইলাতুল কদর তালাশ করা।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে রাতটি লাইলাতুল কদরের রাত হবে, তা চেনার কিছু আলামত হলো,
১. রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
২. রাতটি নাতিশীতোষ্ণ হবে।
৩. মৃদ বাতাস প্রবাহিত থাকবে।
৪. সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত বেশি তৃপ্তিবোধ করবে।
৫. কোনো ইমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়ে দিতে পারেন।
৬. ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হবে।
৭. সকালে হালকা আলোক রশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে, যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো।
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি জানতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দোয়াটি পাঠ করব। তিনি বললেন, তুমি বলো ‘আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী। অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন (তিরমিজি)।
এমএ