ঈদকে ঘিরে সবজির দাম এখনো অনেকটা স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে মুরগির দাম। রমজান শুরুর কয়েক দিন পর বেড়ে যাওয়া মুরগির দাম কমলেও এখন আবারও দাম উর্ধ্বমুখী। বেড়েছে চালের দামও। শুক্রবার সকালে রাজধানীর কয়েকটি বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকাল শেষ হওয়ায় শীতকালীন সবজিও শেষের দিকে। ফলে সবজির দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে নতুন যেসব সবজি এসেছে সেগুলোর দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি।
খিলক্ষেত কাঁচাবাজারে ঢেঁড়শ ১২০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কচুর লতি ১২০ টাকা, গোল বেগুন ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, সাজনা ২০০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শিম বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে।
এছাড়া, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, জালি কুমড়া ৬০ টাকা, পাকা টমেটো প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, খিরা ৬০ টাকা এবং শসা ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে, আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতা করিম বলেন, 'নতুন কিছু সবজির দাম একটু বেশি। আমদানি কম থাকায় আর চাহিদা বেশি থাকায় নতুন সবজির দাম একটু বেশি হয়।'
আধুনিক শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী লিংকন আহমেদ। তিনি বলেন, 'বাজারে দুই ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু সবজির দাম খুব বেশি, আবার বাকি সবজিগুলোর দাম নাগালের মধ্যেই আছে, সেগুলো কিনে স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে। তবে মৌসুম না হওয়ায় পটল, ঢেঁড়স, বরবটি, করলা এমন সব সবজির দাম ১০০ টাকা বা তার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আজ বেগুনের দাম বেশি। তবে বাকি সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম যাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে অন্য বার রমজানের সবজির যেমন বাড়তি দাম থাকে, সেই তুলনায় এবার সবজির দাম তুলনামূলক কম।'
রাজধানী মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, 'আজ বাজারে বেগুনের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গিয়ে ১০০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি হয়েছে। এগুলোর দাম যারা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে অন্যান্য ৩-৪ আইটেমের সবজির বর্তমানে মৌসুম না হওয়ায় সেগুলোর দাম বেশি, সেটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু শুধুমাত্র রমজান মাস হওয়ার জন্য, চাহিদা বেশি থাকায় বেগুনের দাম বাড়িয়ে রেখেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তবে এটা সত্য বাজারে অন্যান্য সবজির দাম বর্তমানে তুলনামূলক কম যাচ্ছে।'
মগবাজারের সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এখন বাজারে সবজির দাম শীতের সময়ের মতোই তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে পটল, বরবটি, ঢেঁড়স, করলা এই ধরনের সবজির এখন মৌসুম নয়, যে কারণে সরবরাহ খুবই কম। তাই এই নির্দিষ্ট কয়েকটি সবজির দাম বাজারে বর্তমানে বেশি, এছাড়া অন্য সবজিগুলোর দাম তুলনামূলক কম যাচ্ছে। সবমিলিয়ে সবজির বাজার পরিস্থিতি বর্তমানে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। নির্দিষ্ট ৩-৪ আইটেমের সবজি ছাড়া সবগুলোর দামই তুলনামূলক কম।'
এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার ও পাকিস্তানি জাতের মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। একই ভাবে বেড়ে পাকিস্তানি মুরগির কেজি ৩০০-৩২০ টাকা হয়েছে। এক ডজন ডিম পাওয়া যাচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়।
মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, 'সপ্তাহখানেক ধরে বাজারে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ তুলনামূলক কম। এ কারণে দাম বেড়েছে।'
তিনি বলেন, 'ঈদে মুরগির কিছুটা বাড়তি চাহিদা থাকে, সেটাও দাম বাড়ার একটি বড় কারণ।'
ব্যবসায়ী মো. রবিউল বলেন, 'এখন অনেকে ঈদের জন্য আগে ভাগে মুরগি কিনছেন। আমাদের ধারণা- এসব কারণে দাম বেড়েছে।'
মধুবাগ বাজারের এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, 'কয়েকদিন ধরে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেড়ে বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ তুলনামূলক কম থাকায় দাম বেড়েছে। ঈদে মুরগির কিছুটা বাড়তি চাহিদা থাকায় দাম বাড়ার অন্যতম একটি কারণ।'
রোজায় অতি মুনাফা করতে মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চালের দাম ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে। এতে খুচরা বাজারেও মূল্য বাড়ছে হু হু করে। পরিস্থিতি এমন- কেজিপ্রতি মিনিকেট চাল কিনতে ক্রেতার সর্বোচ্চ ৯০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ ভোক্তা।
এমএ