মক্কার ধূলোমাখা পথে এক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ীর নাম ছিল আবু বকর। ধনী পরিবারের সন্তান হলেও তিনি ছিলেন বিনয়ী, সদয় ও অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ। ব্যবসায়িক সততার জন্য গোটা মক্কায় তার সুনাম ছিল। কিন্তু তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয় তখন, যখন তিনি এক অনন্য সত্যের সন্ধান পান, ইসলাম।
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ যখন ঘোষণা করলেন যে, তিনি আল্লাহ'র নবী, তখন মক্কার বহু মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করল, কেউ কেউ ব্যঙ্গ করল। কিন্তু আবু বকর (রাঃ) বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে বললেন, "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি আল্লাহ'র রাসুল।" তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করলেন।
তার বিশ্বাস ছিল অকল্পনীয় দৃঢ়। একদিন যখন রাসুলুল্লাহ মিরাজের কথা বললেন, তখন অনেকে এতে অবিশ্বাস প্রকাশ করল। কিন্তু আবু বকর (রাঃ) বললেন, "যদি রাসুলুল্লাহ বলেন- তবে এটি অবশ্যই সত্য।" এই সত্যবাদিতার কারণে তিনি পেলেন "আস-সিদ্দিক" (সত্যবাদী) উপাধি।
মক্কার কাফেররা যখন রাসুলুল্লাহকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল, তখন আল্লাহর নির্দেশে তিনি মদিনার উদ্দেশ্যে হিযরত করলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ একা ছিলেন না, তার সঙ্গী ছিলেন প্রিয় বন্ধু আবু বকর (রাঃ)। সওর গুহার অন্ধকারে, যখন কাফেররা খুব কাছাকাছি চলে এল তখন তিনি উদ্বিগ্ন হলেন। কিন্তু নবী বললেন, "ভয় পেও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।"
রাসুলুল্লাহ এর ইন্তেকালের পর মুসলিম উম্মাহ শোকের সাগরে ভাসছিল। তখন আবু বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, "যে মুহাম্মদকে পূজা করত, সে যেন জানে, মুহাম্মদ ইন্তেকাল করেছেন। আর যে আল্লাহকে পূজা করত, সে জানুক, আল্লাহ চিরঞ্জীব।"
তার এই ভাষণ মুসলমানদের মধ্যে স্থিরতা ফিরিয়ে আনে। এরপর সর্বসম্মত ভাবে তিনি ইসলামের প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন।
তার খিলাফতের সময় ইসলাম কঠিন পরীক্ষা দিয়েছিল। কিছু লোক ইসলাম থেকে সরে দাঁড়ায়, কিছু ভণ্ড নবী আবির্ভুত হয়। কিন্তু আবু বকর (রাঃ) বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে বললেন, "যদি কেউ জাকাত না দেয়, আমি তাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করব।"
তিনি মুসাইলিমা কাফফারের বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করেন এবং ইসলামী সাম্রাজ্যকে সুসংহত করেন। তার আরেকটি বড় অবদান ছিল কোরআন সংকলনের উদ্যোগ নেওয়া যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ইসলামকে অটুট রাখে।
মাত্র দুই বছর খিলাফত করার পর আবু বকর (রাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত্যুর আগে তিনি পরবর্তী খলিফা হিসেবে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর নাম সুপারিশ করেন। ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে, মদিনার শান্ত প্রান্তরে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এবং রাসুলুল্লাহ এর পাশেই সমাহিত হন।
আবু বকর (রাঃ) শুধু একজন শাসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন বন্ধুত্বের, বিশ্বাসের ও ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার জীবন আমাদের শেখায়, সত্যের জন্য যদি পুরো দুনিয়াও বিরোধিতা করে, তবুও ধৈর্য ধরতে হবে, বিশ্বাস রাখতে হবে ঠিক যেমনটি করেছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)।
এমএ