Friday | 13 June 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Friday | 13 June 2025 | Epaper
BREAKING: এবার বিচার বিভাগের ৮ স্থাপনার সামনে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা       তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি জব্দ      দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ বন্যায় নিহত ৪৯      ঢাকায় একদিনে ১০ জনের করোনা শনাক্ত      গোপালগঞ্জে বাস ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশু নিহত, আহত ৪      বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তায় আগ্রহী কমনওয়েলথ       

সেনাবাহিনী বা প্রধান নিয়ে অপরিনামদর্শী স্মার্টনেস কাম্য নয়

Published : Saturday, 29 March, 2025 at 12:46 PM  Count : 164

মাত্র মাস আটেক আগে কী দশা-দুর্গতিতে ছিলাম, কার উছিলায় কিভাবে এখন মুক্ত বাতাসে দম –নিঃশ্বাস নিচ্ছি; দিব্যি ভুলে যাওয়ার প্রবণতা। সন্তুষ্টির বদলে যার–তার সমালোচনা। বুকে বুক, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুঃসাধ্য বিজয় অর্জনের ঘটনাগুলো এতো দ্রুত তলিয়ে যাওয়া সবার জন্যেই দুর্ভাগ্যের। বিশেষ করে আন্দোলনের স্ট্যাকহোল্ডারদের কারো কারো মন্তব্য খোদার আরশ কাঁপানোর মতো। পরস্পরের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝাঁঝ নেমক হারামির নামান্তর। তবে, ৫ আগস্টের স্পন্দন সাধারণ মানুষের মনোজগতে একটা পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। প্রকারান্তরে এটিও একটি সংস্কার। বিশেষ করে নিজ দেশের সেনাবাহিনী সম্পর্কে হালকা-তাচ্ছিল্যপনায় স্মার্টনেস দেখানো তাদের কাছে অসহ্য। সশস্ত্রবাহিনী কেবল স্বার্বভৌমত্বের প্রতীকই নয়, একটি দেশের স্থতিশীলতায়ও কতো বলীয়ান তা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে বাস্তব করেছে সেনাবাহিনী। বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থাকা এ বাহিনীর সদস্যরা কোথাও শো আপ করছে না। যাচ্ছে না বলপ্রয়োগে। সহায়কের মতো কাজ করছে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সাথে। সেনা সদস্যদের মাঠ থেকে সরালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কী দশা হবে, কারো কারো ধারনায় না থাকলেও সাধারণ বুঝজ্ঞানের মানুষ তা যথাযথ উপলব্ধি করে।   

যে কোনো দেশের সশস্ত্রবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে হালকা কথা বললে তাদের মনোবলে টোকা পড়ে। বহি:শত্রুদের মাঝে এতে তৃপ্তির ঢেঁকুর আসে। তারা সুযোগ নেয়ার সাহস পায়। এতে অনিবার্যভাবে দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দেয়। যা দেশটির জন্য ভীষন আত্মঘাতী। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ববিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা সেই অপেক্ষাই করছে। সচেতন নাগরিকরা গত দিনের আলামতে তাই উদ্বিগ্ন। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত পেশাদার, দক্ষ, প্রত্যয়ী। উচু মনোবলে কেবল নিজেরা নয়, জনতাকে নিয়েও ঐক্যবদ্ধ। বাহিনী প্রধানের ক্যারিশমা-বিচক্ষণা-পেশাদারীত্বে মুগ্ধ। অফিসার, সৈনিক, এমনকি সেনাপ্রধানের একসূত্রে গাঁথার এ নজিরের মাঝে যে কোনো একজনের প্রতি কেউ অসম্মান করলে তার আঁচর সবার গায়ে লাগে। তাদের কাছে এটি  পুরো বাহিনীর প্রতি অসম্মান বলে মনে হয়। 

রাজনীতিতে উড়িয়ে দেয়া, গুড়িয়ে দেয়া, টুস করে চুবিয়ে দেয়া, ধপ করে ফাটিয়ে দেয়া ধরনের কথায় ক্রেজ তৈরি বা হাইপ তোলার রেওয়াজ এ দেশে আছে। তাই বলে ক্যান্টনমেন্ট, সেনাপ্রধানকে হুমকি-ধমকি! এতে ভাইরাল হওয়া যায়, কিন্তু নিজের ওজনও থাকে? এসএসএফের গান পয়েন্টে দাঁড়িয়ে বন্দুকের নল ঘুরিয়ে দিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারি অপরাধ করে ফেলেছেন? তাকে এখন প্রতিদান দিতে হবে? সেদিন ওই ভূমিকার জন্য তার জীবন যেতে পারতো। আর সেই ভূমিকা তিনি নিয়েছেন বলে্‌ই আজকের বাতাস এতো মুক্ত। কথা বলার এতো স্বাধীনতা। নির্বাচন দাবি করা, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন, পাবলিক-রিপাবলিক, নতুন দলসহ কতো আলাপ। এতোসব কার উছিলায়?  বর্তমানের সেনাবাহিনী এবং তার প্রধান যথেষ্ঠ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। সইছেন নানা খোঁচা ও উস্কানি। এর আগে, রাওয়া ক্লাবের অনুষ্ঠানে যদ্দূর সম্ভব সবাইকে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, পরে যেন কেউ তাকে দোষারোপ করতে না পারেন। চাইলে তো সেই সতর্কতা না দিলেও পারতেন। বসে বসে মজা দেখতেন। কিছুদিনের ব্যবধানে আবারো সতর্কবার্তার সঙ্গে পরামর্শও রাখলেন সেনাপ্রধান। ঢাকা সেনানিবাসের সেনাপ্রাঙ্গণে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে অফিসার্স অ্যাড্রেস বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নানা অপপ্রচার, উসকানিমূলক বক্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন সেনাপ্রধান। পরামর্শ হিসেবে বলেছেন,  গুজব–ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। তার বিশ্বাস বর্তমান পরিস্থিতিতে যে দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে সেনাবাহিনী কাজ করছে, সেটি দেশ ও জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে। ঢাকার বাইরের সেনা কর্মকর্তারা অনলাইন মাধ্যমে এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া না দেখানোর বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, এমন কিছু করা যাবে না, যাতে উসকানিদাতাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়। একজন সেনাপ্রধানের পক্ষে আর কতোটুকু বলা সম্ভব?

সাম্প্রতিক অপতথ্যের ফের বা মতলব কে না বোঝে? পোস্টদাতারা অনেকেই আন্ডারগ্রাউন্ড কিংবা ফেক আইডি থেকে গুজব ছড়ায়। তার ওপর আছে আশোভন মন্তব্য, খিস্তিখেউড়, ট্রল। আবার অনেকেরটা নাম দেখেই বোঝা যায় এগুলো সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের মানুষের পক্ষে হজম অযোগ্য। দেশে এখন একটা বিশেষ পরিস্থিতি। নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে। কোনো কোনো দল তো নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার। পরীক্ষিত সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করে একটি ঐতিহাসিক নির্বাচনের তাগিদ রয়েছে কারো কারো। এগুলোর সবই প্রস্তাবনা। কোনোটিউ চূড়ান্ত নয়। সমস্যা দেখা দিচ্ছে প্রকাশের ভাষা-ভঙ্গি নিয়ে। মনোজগতে কারো কারো উদ্দেশ্যই হচ্ছে সমালোচনা-নিন্দা-গীবৎ করা। তা সেনা প্রধানের নামাজের ইমামতি নিয়েও। নামাজে ইমামতি করার যোগ্যতা-সৌভাগ্য সবার হয় না। আবার নিয়মিত নামাজ একজন মানুষকে ধৈর্য্য ও সহনশীল করে গড়ে তোলে, তা বুঝতে হাদিস-কোরআন জানতে হয় না। জেনারেল ওয়াকারের ওই গুণ-যোগ্যতার খবর জানেন তার পরিবারের সদস্যের বাইরে ক্লাসমেট এবঙ কোর্সম্যাটরা। এখানে তার কোর্সম্যাট একসময়ের সহকর্মী সাবেক সেনা কর্মকর্তা, পরে সাংবাদিকতার কঠির তারে জড়িয়ে যাওয়া আবু রুশদ মো. শহিদুল ইসলামের ফেসবুক পোস্টটি বড় প্রাসঙ্গিক। লেখার প্রয়োজনে এর কয়েক লাইন উল্লেখ না করলেই নয়।

আবু রুশদ লিখেছেন, ওয়াকার যৌবনের ধারালো সময়েও ইমামতি করতেন। স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাগরিবের নামাজে ইমামতি করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তার নামাজ পড়ানোর ছবি প্রকাশ হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসার পাশাপাশি ব্যঙ্গ করার কিছু লোকের ক্রিয়াকর্মও দেখতে হলো। নিজের ফেসবুক পেজে রুশদ মিলিটারি একাডেমিতে একসঙ্গে কোর্স করার অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন। এতে তিনি লিখেন, ‘আমার বন্ধু জেনারেল ওয়াকারের ইমামতি প্রসঙ্গে: সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার নামাজে ইমামতি করছেন এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেনাপ্রধান ইমামতি করেন? উনি কি সেনাপ্রধান হওয়ার পর এটা শুরু করেছেন? প্রশ্ন অনেকের। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও তির্যক মন্তব্য করছেন অনেকে! জেনারেল ওয়াকার বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে আমার কোর্সমেটই শুধু ছিলেন না, তিনি আমার রুমমেটও ছিলেন। বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর কোম্পানিতে আমরা একই প্লাটুনে প্রশিক্ষণের দুই বছর কাটিয়েছি ১৯৮৪-৮৫ সালে। আবার তৃতীয় টার্মে দুইজন একই প্লাটুন কমান্ড করেছি। মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ কেমন তা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের কোনো ধারণা নেই। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মে বাপ-দাদার নাম ভুলে যাওয়ার অবস্থা হয়। একটু ঘুমানোর সময় বের করা এরমধ্যে স্বর্গীয় সুখের মতো অনুভূতি তৈরি করে। আমরা সবাই কোনোভাবে ঘুমাতে পারলে বাঁচি। শীতের রাতে পানি, কাদায় মাখামাখি হয়ে যখন রুমে আসতাম তখন গোসলটা করে সোজা বিছানায়। এর মধ্যেও তদানীন্তন (ক্রমান্বয়ে) জেন্টলম্যান ক্যাডেট-ল্যান্স করপোরাল-কোম্পানি কোয়ার্টার মাস্টার সার্জেন্ট ওয়াকার গোসল করে ওজু করে নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে যেত। কাজা নামাজসহ সব আদায় করে ঘুমাতে যেত। আমিসহ আমাদের কোর্সের ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ ক্যাডেট ওইভাবে নামাজ আদায় করতে পারিনি। 

পোস্টের আরেক জায়গায় আবু রুশদ লিখেছেন, আমাকে কত যে হেদায়েতের চেষ্টা জে. ওয়াকার করেছেন! আই প্রেফারড স্লিপ!!! হি প্রেফারড প্রেয়ার!আরেকজন এমন ছিল কর্নেল নুরুল। উনিও ফাইনাল টার্মে আমার রুমমেট ছিলেন যখন দুইজনই আমরা আন্ডার অফিসার ছিলাম। ওই তরুণ-যুবক বয়সে জেনারেল ওয়াকারকে কাছে থেকে যতোটুকু দেখেছি তাতে তিনি ছিলেন অতি নরম মনের একজন মানুষ। এ নিয়ে আমরা উনাকে খেপাতাম। জুনিয়রদের যেখানে আমি কঠোর, কঠিন, মিলিটারি বুলশিট করতাম উঠতে বসতে যাতে অবধারিতভাবে স্ল্যাং থাকতো সেখানে জেনারেল ওয়াকার একটা স্ল্যাং ইউজ করতো না!’ তিনি লিখেন, ‘নবী, রাসুল ছাড়া সব মানুষের মধ্যে পাপ, দোষত্রুটি আছে। জেনারেল ওয়াকার তার ব্যতিক্রম নন। তাকে নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনা আছে, থাকবে। এ নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। কিন্তু ব্যক্তি ওয়াকারের ইমামতি দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই! উনি যৌবনের ধারালো সময়েও ইমামতি করতেন! আমি কোর্সমেট, রুমমেট হিসেবে অন্তত উনার এই দিকটা নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি। খুব কষ্ট লাগে তার এই ইমামতি দেখেও কিছু অতি হাইপার অতি নিম্নমানের কথাবার্তা বলছেন দেখে! 

সমালোচনা ভালো। সমালোচনার অধিকার সবার আছে। কখনো কখনো সমালোচনায় উপকারও হয়। শুদ্ধি আসে। তাই বলে সেনাবাহিনী বা বাহিনীটির প্রধানকেও সমালোচনার জন্য সমালোচনা করা কাম্য নয়। তা মোটেই স্বাধীনতা নয়, স্মার্টনেসও নয়। গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষনীয় এবারের পটপরিবর্তনে সেনাবাহিনীর জনসম্পৃক্ততার অনন্য নজিরকে বানচাল করতে মহলবিশেষ নানা ফাঁদ পাতছে। কেউ দেশে কেউ ভিনদেশে বসে এ টোকায় শরীক হচ্ছে। স্যোশালমিডিয়ার কথা ভিন্ন। কারণ তাদের কোনো সম্পাদকীয় কর্তৃপক্ষ নেই। দায়বদ্ধতা নেই। হিট বা ভাইরাল হতে গিয়ে নিজের সম্পর্কে অশ্রাব্য শব্দ-বাক্য ব্যবহারও তাদের কাছে বিষয় নয়। নিজেকে নিজে দিগম্বর করতেও লজ্জা পাবে না তাদের। কিন্তু দেশে একান্নবর্তী পরিবারের মতো রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজনীতিতে সম্পৃক্তরাও বুঝে, অবুঝে বা অতিবুঝে, ফাঁসে-বেফাঁসে সেনাবাহিনীর ইমেজে আঘাত করে বসা বড় অপরিনামদর্শী। জুলাই আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনার হাসনাত আবদুল্লাহ বয়স দোষে তা করে দেরিতে হলেও বুঝেছেন। বয়সী-বুঝবান রাজনীতিকদের কেউ কেউও মাঝেমধ্যে এ পথ মাড়াচ্ছেন অবিবেচকের মতো।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন 


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close