Saturday | 17 May 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Saturday | 17 May 2025 | Epaper
BREAKING: উপদেষ্টার উপর বোতল নিক্ষেপকারী এখন ডিবি হেফাজতে       নিরাপদে অবতরণ করেছে চাকা খুলে যাওয়া বিমানের ফ্লাইটটি      কালীগঞ্জের সাবেক মেয়র রবীন হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু       কমেছে মুরগি-সবজির দাম      ঈদযাত্রায় বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু      গণঅনশন করবে জবি শিক্ষার্থীরা      ২ ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা ঘরে তুললো বার্সেলোনা      

নিরাপত্তা হুমকী মোকাবেলায় চাই একতা

Published : Sunday, 30 March, 2025 at 9:05 PM  Count : 177
প্রতিদিন এক অজানা আতঙ্কে ঘুম থেকে  জেগে উঠি, দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা কখন বিঘ্ন হয়, কে জানে।  চেষ্টা করি সব চিন্তার কালো দূর করতে, কিন্তু আবারো তা ঘিরে ধরে। কেনো এমন হচ্ছে? গতবছর ৫ আগষ্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে জনমনে যে আনন্দ বিকশিত হয়েছিলো, কিছু মাসের দূরত্বেই সেই আনন্দানুভূতি অনেকটাই উবে গেছে।  সেখানে নানা দূর্ভাবনা এবং তার সাথে এসে যুক্ত হয়েছে ক্রমাগতভাবে সেনাবাহিনীকে হেয় করার আত্মঘাতী প্রবনতা।

কিন্তু কেনো এসব হচ্ছে  এবং কারা করছে? দেখাই যাচ্ছে, এসব করছে দেশে নতুন করে গজানো কাঁচা লতার মতো রাজনৈতিক দলের তথাকথিত নেতা। এসব করছে তাদরে গুরু ইউটিউবে টাকা কামানো এবং মহা বিলাসে বিদেশে বসবাস করা অপরাধি মানসিকতা সম্পন্ন লোক। চেহারাগুলো সকলের চেনা। তাদের  ভাবটা হলো, তারা মস্ত নেতা। দেশের জনগণ তাদের কথায় উঠে আর বসে। নিজের অহংকারে তারা এতটাই অবরুদ্ধ যে, নিজের দুর্বল হাতপা নিজের চোখেই পরে না। তারা ভুলেই যায়, সশস্ত্রবাহিনী একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ।  

কিন্তু দেশের মানুষ জানে, দেশের ভূখর নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে একটি দক্ষ, একতাবদ্ধ ও মনোবলসম্পন্ন সশস্ত্রবাহিনীর বিকল্প নেই। বাংলাদেশ  সেনাবাহিনী সেই ভূমিকা অত্যন্ত  পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজনীতি করতে আসা কিছু অপরিনত তরুণের অসুস্থ্য মানসিকতার কদর্য বহিঃপ্রকাশও ঘটছে। নিঃসন্দেহে এসব প্রচেষ্টা সেনাবাহিনীর প্রতি জনআস্থা বিনষ্ট করতে কালো ছায়া ফেলতে চায়। পষ্টই মনে হয়, তাদের এসব কথাবার্তা নিছক সমালোচনা নয়, বরং বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ।

ইতিহাস জানে, যেসব রাষ্ট্র তাদের সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা অচিরেই রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় ডুবে অভ্যন্তরীণ স্তরে ক্ষতির মুখে বিদেশি আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এমন ধারার কিছু অস্বাভাবিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবুও একটি মহল সুনির্দিষ্টভাবে  সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে অপমান করে পুরো বাহিনীকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে জিদ ধরেছে। সামাজিক  যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু রাজনৈতিক প্লাটফর্ম থেকে সেনা প্রধানকে উদ্দেশ্য করে  নোংরা ও বিভ্রান্তিকর ভাষা প্রয়োগ করেই যাচ্ছে তারা। কয়েকজন কুলাঙ্গার তো অসীম ধৃষ্টতায়  হুমকী দিয়ে বলছে, ক্যান্টনমেন্ট উড়িয়ে দেবো। সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দিতে প্রস্তুত। তাদের এসব হুঙ্কার সুস্পষ্ট করেই দেশদ্রোহ। তাদের ভাষায় পষ্ট, তারা সেনাবাহিনীর কাঠামো এবং মনোবল ভাঙার হীন প্রয়াসে লিপ্ত। তারা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলছে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ষড়যন্ত্র  কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন বা একক ব্যক্তির অভিপ্রায় নয়; বরং এটির পেছনে দেশি-বিদেশি নানা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সমন্বিত প্রয়াস রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ যে ভূরাজনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত, তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য একটি কৌশলগত স্পর্শকাতর এলাকা। 

প্রসঙ্গত, অবসরে যাওয়ার আগে আমি বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা সাতজাতি রাষ্ট্র মিলে অর্থনৈতিক ও টেকনিক্যাল উন্নয়নের  আঞ্চলিক সংস্থা বিম্সটেক এর সদর দফতরে উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ছিলাম। উন্নয়ন স্ট্রাটেজি প্রণয়নের সময় বুঝবার পূর্ণ সুযোগ পেয়েছি এই অঞ্চলটির নিরাপত্তার ধরণগুলি কতখানি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রেক্ষিতেই বলি, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক এবং সামরিক অস্থিরতা  যেকোনো সময় একটি বিস্তৃৃত সংকটে রূপ নিতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার  যে  কোনো প্রয়াস সরাসরি আমাদের দেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলার সামিল।

এই বাস্তবতায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের সীমান্তবর্তী অঞ্চল কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি অংশ সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে। সপ্রতি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর একটি প্রতিবেদন জানায়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই মিয়ানমারে যুদ্ধ করতে, এমনকি মৃত্যুবরণ করতেও ‘প্রস্তুুত’। তারা এখন নিজেদের ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ হিসেবে দাবি করছে।

এই পরিস্থিতিকে কখনোই সরলরৈখিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। রোহিঙ্গা ইস্যু এতদিন পর্যন্ত ছিল মানবিক সংকটের সীমায়। কিন্তু বর্তমানে এদের একটি অংশের অস্ত্রধারী মিলিশিয়ায় রূপান্তরের কারনে মিয়ানমার নয়, বাংলাদেশও জটিল প্রকৃতির নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। মূলতঃ এদের অনুপ্রবেশ, অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র পরিবহন, সীমান্ত পারাপার এবং ক্যাম্পের ভিতরে রাজনৈতিক-সামরিক সংগঠনের বিকাশ বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শুধু কী রোহিঙ্গারা এমন হুমকীর জন্ম দৃশ্যমান? এরসাথে ঘাড়ের ওপর বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গড়ে উঠা বিদ্রোহী গোষ্ঠী 'আরাকান আর্মি'। তারা এখন এক ভয়ঙ্কর সামরিক শক্তিতে পরিনত।  ইতোমধ্যে ৩০ হাজারের বেশি নিয়মিত যোদ্ধার একটি সংগঠিত বাহিনী মিয়ানমারের  সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের নাফ নদীর তীর ঘেঁষে আরাকান আর্মির শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের সংখ্যা বৃদ্ধির যুগল চিত্র বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ক্রমে এক জটিল নিরাপত্তা সংকটের জন্ম দিচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ করার অবকাশ নাই। এক্ষেত্রে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, এমন যদি হয় যে, এই দুই শক্তির মধ্যে  যোগসূত্র গড়ে উঠে, -   তাহলে এ  কেবল সীমান্ত অঞ্চলে নয়, বরং  বাংলাদেশের পুরো নিরাপত্তাকেই তচনচ করতে পারে।

আসলে যে কোনো নিরিখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার চেষ্টা কোনো অবস্থাতেই  মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশকে রক্ষায় এই একটি প্রতিষ্ঠান এখনো সুসংহত এবং পেশাদারি মনোভাবে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করছে। কিন্তু যারা সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চক্রান্তের জাল বুনছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে করা অপপ্রচার শুধু একটি প্রতিষ্ঠানকে নয়, পুরো রাষ্ট্রকাঠামোকেই দুর্বল করার ষড়যন্ত্র। আমাদের বুঝতে হবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোনো ব্যক্তিবিশেষ নয়, এটি একটি সংগঠন। সেনাপ্রধান বা অন্য  কোনো কর্মকর্তার ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ করা মানে পুরো বাহিনীর মনোবলে আঘাত হানা। অথচ সকলেই জানি, সেনাবাহিনী তার  চেইন অব কমান্ড, একতা এবং শৃঙ্খলার জন্য পরিচিত। বাহিনীর  কোনো অংশকে আলাদা করে বিবেচনা করা অসম্ভব, পুরো মুর্খতা।

সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দেবার হুঙ্কার দেশ ও জনগণকে বিপন্ন করার ডাক। এমন পরিস্থিতিতে, দেশের সাধারণ জনগণ, রাজনৈতিক  নেতা, সুশীল সমাজ, এবং গণমাধ্যমকর্মীদের একযোগে দায়িত্বশীল হতে হবে। সকলের চিন্তা করা প্রয়োজন, কিভাবে এই রাষ্ট্রকে বিদেশী ষড়যন্ত্র ও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার হাত  থেকে রক্ষা করা যায়। কোনো বাহিনী তখনই দুর্বল হয়, যখন তার  পেছনে জনসমর্থন থাকে না।  সেই সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে আমাদেরই। যারা হীন স্বার্থে সেনাবাহিনীর ঐক্যে আঘাত করতে প্রতিদিন কাজ করছে, তাদের জানা দরকার দেশ সুরক্ষায় সৈনিকের অস্ত্র কেবল সীমান্তের শূণ্যরেখায় শত্রর দিকে তাক করা থাকে না, প্রয়োজনে দেশের ভেতরে মাথা চাড়া দেয়া শত্রকেও চিহ্নিত করে কঠোর হতে জানে। দেশের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করবে,  কঠোরভাবে তাদের রুখে দিতে সেনাবাহিনী কুন্ঠাবোধ করবে বলে মনে করিনা। বাংলাদেশের ভূখ এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায়  সেনাবাহিনীর ঐক্যের ছায়াতলে সকলেই একত্রিত হলে অভিশপ্ত শকুনদের হুমকীর বিপরীতে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।  

                                  লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কবি ও কথাশিল্পী।



LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close