চৈত্র সংক্রান্তী (রোববার) ও পহেলা বৈশাখ (সোমবার) উপলক্ষে “শেষের কবিতা” নাটকের প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল “প্রাঙ্গণেমোর” নাট্যদল। মহিলা সমিতি মঞ্চে যেন কোনো নাটকের প্রদর্শনী করতে দেওয়া না হয় তা জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছে “তৌহিদি জনতা”।
রোববার নাট্যব্যক্তিত্ব নূনা আফরোজ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নূনা আফরোজ পোস্টে লিখেছেন, “এই মাত্র মহিলা সমিতি ফোন করে জানালো তৌহিদী জনতা তাদেরকে চিঠি দিয়েছে, মহিলা সমিতিতে যেন কোনো প্রদর্শনী করতে দেওয়া না হয়।”
তিনি আরও লিখেন, “রোববার চৈত্র সংক্রান্তী এবং আগামীকাল পহেলা বৈশাখ ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী হওয়ার কথা। আমরা মহিলা সমিতিকে দুই দিনের হল ভাড়া দিয়েছি। প্রচার, প্রকাশনায় সকল খরচ করা হয়ে গেছে। আমাদের সকল প্রস্তুতি, সকল আয়োজন সম্পন্ন। আয়োজনের প্রতিটি সেক্টরে খরচ করা হয়ে গেছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে এতদিন ধরে।”
“আমরা মহিলা সমিতিকে বলেছি আপনারা প্রশাসনের সাহায্য নেন। প্রশাসন অপারগতা প্রকাশ করলে না হয় আমরা প্রদর্শনী নাইবা করলাম। মহিলা সমিতি জানালো, কত কিছুই তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রশাসন তো বন্ধ করতে পারছে না।”
নূনা আফরোজ পোস্টে প্রশ্ন করেন, “প্রশাসন কি সহযোগিতা করবে আমাদের? সংস্কৃতি অঙ্গণের ও দেশের সচেতন মানুষেরা বলুন কী করবো? এমনই চলতে থাকবে??”
মহিলা সমিতির একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, “দেশের যে অবস্থা চলছে, তা তো দেখছেনই। পুলিশকে জানালে কি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে? আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার কথাও তো ভাবতে হবে। এখন মহিলা সমিতিতে এসে কেউ যদি ‘তৌহিদী জনতা’র নামে ভাঙচুর করে, তবে কে দায় নেবে? আমাদের তো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। মহিলা সমিতির নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই আসলে প্রদর্শনীটি বাতিল করা হয়েছে।“
জানা গেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “শেষের কবিতা” উপন্যাস থেকে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন অনন্ত হিরা এবং নির্দেশনা দিয়েছেন নূনা আফরোজ। এটি “প্রাঙ্গণেমোর” নাট্যদলের ষষ্ঠ প্রযোজনা।
নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর জানিয়েছে, হঠাৎ করে মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিলের প্রতিবাদে রোববার বিকেল ৫টায় মহিলা সমিতির সামনে “শেষের কবিতা” নাটকের পোশাক পরে নাট্যকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।
এদিকে, নূনা আফরোজের পোস্ট নাট্য অঙ্গনে আলোড়ন তোলে। বহু মানুষ তার পোস্টে মতামত দিচ্ছেন।
নাট্যব্যক্তিত্ব মলয় ভৌমিক লিখেছেন, “তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই! সবাই দ্রুত বসুন। কেউ নিরাপদ থাকতে পারবেন না। এই উপলব্ধি থেকে নিজেরা পাহারাদার হয়ে বাইরে অনুষ্ঠান করার উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না দেখুন। অনুষ্ঠানের মান নিয়ে আপাতত ভাবার প্রয়োজন নেই। প্রতীকী প্রতিবাদী অনুষ্ঠান হলেও সম্মিলিত উদ্যোগ নিন।”
হাসিবুর রহমান তুষার নামের একজন লিখেছেন, “রমনা থানায় নিরাপত্তা প্রদান প্রসঙ্গে একটা চিঠি দিয়ে রিসিভ কপি সংগ্রহে রাখেন। তারপরও যদি তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় তবে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া লাগবে।”
ইবনে মারুফ নামের একজন লিখেছেন, “তৌহিদী জনতা বলতে কোনো সংগঠন নেই। আমরা মুসলিমরা সবাই তৌহিদী জনতা। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট দল তৌহিদী জনতার নাম করে বর্তমান পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা করছে। আপনারা আইনের আশ্রয় নিন।”
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মহিলা সমিতি মিলনায়তনে একদল ব্যক্তির হুমকির মুখে স্থগিত হয়েছিল “ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব”। পরে রোজার মাসে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ কোনো নাট্যদলকে মিলনায়তনে বরাদ্দ দেয়নি।
ঈদের পর প্রাঙ্গণেমোরের “শেষের কবিতা” দিয়ে মহিলা সমিতিতে ফের নাটকের প্রদর্শনী শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, “তৌহিদী জনতা”র চিঠিতে সেই প্রদর্শনীও অনিশ্চয়তায় মুখে পড়লো।