Sunday | 27 April 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Sunday | 27 April 2025 | Epaper
BREAKING: বিদ্যুৎ-মেট্রোরেলসহ যেকোনো ধরনের সেবা বিঘ্নিত হলে টেলিভিশনে স্ক্রল দিতে হবে      গরমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে: জ্বালানি উপদেষ্টা      মাঠে ফেরার সময় জানালেন তামিম      পিকআপ-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ৫      রোমে বাংলাদেশ হাউস পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা      ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত আরও ৮৪      কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন      

স্বদেশেই উস্কানি-গুজবের কাঁঠগড়ায় ভারত

Published : Tuesday, 15 April, 2025 at 10:00 AM  Count : 109

একদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ভূয়া অভিযোগ এবং এ সংক্রান্ত নানা কল্প কাহিনী, আরেক দিকে নিজ দেশে মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের স্ট্রিমরোলার চালাচ্ছে ভারত। চলছে গুজবসহ বানোয়াট ছবি ছড়ানোর পাগলা ঘন্টাও। অভিযোগের তীর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি- বিজেপির দিকে। 

মুর্শিদাবাদে অশান্তির আবহে স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো একাধিক ভুয়া ছবি শনাক্তও করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ওয়াকফ বিল সংসদে পাসের পর থেকেই মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত অশান্তি। উত্তপ্ত এই পরিস্থিতির মাঝেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ। বিশেষ করে বিজেপির তরফ থেকে সামাজিক মাধ্যমে যে একাধিক ছবি প্রচার করা হচ্ছে, তা নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানির অপচেষ্টার অভিযোগ তুলেছে পুলিশও।

ওয়াকফ আইন সংশোধনের পর বিক্ষোভ-সংঘর্ষ-প্রাণহানির পর থমথমে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনী। শুক্র ও শনিবারের সহিংসতায় তিন জনের মৃত্যুর পর চলছে চোরাগুপ্তা হামলা। গুলিবিদ্ধ বেশ কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি জারি আছে আধা সামরিক বাহিনীর টহল ও সতর্ক নজরদারি। অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুর্শিদাবাদের নতুন কয়েকটি এলাকা ছাড়াও মালদহ আর বীরভূমের কয়েকটি এলাকায় দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়।

স্থানীয় প্রশাসনের বার্তা হচ্ছে, সহিংসতায় সরাসরি জড়িত আর ইন্ধনদাতাদের ধরতে অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনী। পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় নেমেছে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। হিন্দু-মুসলিম দাঙা বাধিয়ে ফায়দা নিতে বিজেপির ভেরিফাইড পেইজ থেকে ভুয়া ছবি ছড়ানো অভিযোগ তুলেছে রাজ্য পুলিশ। 

দাবি করা হচ্ছে, ছবিগুলো নাগরিক সংশোধনী আইনের সময় উত্তর প্রদেশ, আসাম ও কর্নাটকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের। উত্তর প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কথা বড় শক্ত।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ, জাতীয় ও মুখপাত্ররা বিজেপির ক্রিয়াকর্মে নোংরা রাজনীতি দেখছেন। তাদের দাবি, বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে ভুয়া ছবি ছড়িয়ে গণ্ডগোল আরো পাকাতে চায়। 

দলের মুখপাত্র, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেছেন, সীমান্ত থেকে বিএসএফের একাংশের সহযোগিতায় কিছু দুষ্কৃতী বাংলায় ঢুকেছে, যারা ইচ্ছাকৃত ভাবে এই গন্ডগোল ঘটিয়েছে। এলাকার বাসিন্দারাও যাদের চিনতে পারছেন না। এটা স্পষ্ট ষড়যন্ত্র। কেন্দ্রীয় একাধিক সংস্থার সঙ্গে মিলে গোপন নীলনকশা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। গন্ডগোল ঘটিয়ে পরে তাদের সরিয়েও দেওয়া হচ্ছে।

বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব ছবি ছড়াচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগই অন্য রাজ্যের, এ অভিযোগ করে
জানান, একটি ছবি এনআরসি আন্দোলনের সময় লখনৌয়ের, আরেকটি জলন্ধরের, যেখানে একটি বাড়িতে আগুন লেগেছিল। আরও কিছু ছবি ম্যাঙ্গালোর, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ ও অসমের। অথচ সেগুলোকেই মুর্শিদাবাদের ঘটনা বলে চালানো হচ্ছে। 

একই সুর তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষের। ধর্মীয় বিভাজন ও প্ররোচণার রাজনীতি বিজেপির একটি কদাকার কৌশল বলে মন্তব্য তার। 

তৃণমূলের তরফ থেকে রাজ্যের মানুষকে সতর্ক থাকার আবেদন জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এই ভয়ঙ্কর খেলায় বিভ্রান্ত না হতে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য স্তরের শীর্ষ স্থানীয় নেতারাও বারংবার শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন করেছেন। বলেছেন, ভোটের রাজনীতিতে না পেরে বিভাজন চাঙ্গা করা, সাম্প্রদায়িক কেওয়াজ প্রয়োজনে দাঙ্গা বাধানো নরেন্দ্র মোদীর পুরানো খেলা, সতর্কতাও দিয়েছেন তারা। 

ভারতে ওয়াকফ আইন পাসের পর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায় বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় একটি মাদ্রাসা। প্রশাসনের দাবি, অবৈধ ভাবে জায়গা দখল করে তৈরি করা হয়েছিল ওই মাদ্রাসা।

নির্বাচন ঘনিয়ে এলে বা দেশীয় রাজনীতিতে কুলাতে না পারলে এ ধরনের কিছু একটা করার কাজে নরেন্দ্র মোদী বরাবরই এক পাকা খেলোয়াড়। বাংলাদেশ প্রশ্নে নিজ দেশের রাজনীতিতে মার খেয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে পালানো শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে শুরুতে কয়েক দিন একতরফা বেনিফিট নিলেও সাম্প্রতিক সময়ে একটা ঘোরপ্যাঁচে পড়ে গেছেন তিনি। 

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর থেকে বাংলাদেশ কথা বলছে ভারতের চোখে চোখ রেখে। আধিপত্যবাদ ঠেকানোর একটা ঐকমত্য বাংলাদেশে হয়ে গেছে। আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ যে জুলাই আগস্ট বিপ্লবে জয়লাভ করেছে ভারতের কোনো কোনো অংশের কাছে তা এখনো অবিশ্বাস্য। এতদিন ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্ব নিয়ে বড়াই করেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসররা। ধীরে ধীরে সব সত্য এখন সামনে আসছে।

বিগত স্নায়ু যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর শত্রু সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল ভারত। ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র বিজয়ী হয়। চানক্য ভারত রাতারাতি রাশিয়াকে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। তবে গোপনে এবং প্রকাশ্যে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই ভারতকে সন্দেহের চোখে দেখে। বর্তমানে মাল্টিপোলার বিশ্ব রাজনীতিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রূপরেখা এবং নতুন বাণিজ্য-স্নায়ু যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের কাছে ধরাশায়ী হবার সন্ধিক্ষণে। নেপাল, ভুটান, সেভেন সিষ্টার, বাংলাদেশ এবং বঙ্গোপসাগরের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দুয়ারে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বেজিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ভারতের জন্য বিষের মত।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রকাশের পর থেকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং স্থিতিস্থাপক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সময়ে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে এ ধরনের অঙ্গীকারবদ্ধ হ‌ওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলো। দক্ষিণ এশিয়া তথা এশিয়ার রাজনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে, তা ভারতের রাজনীতিক-কূটনীতিকদের জন্য উদ্বেগের। তার ওপর দেশটির অভ্যন্তরীণ গোলমাল। দেশটির যেসব প্রচার মাধ্যম ক’দিন আগেও ব্যতিব্যস্ত থেকেছে বাংলাদেশে গণ্ডগোল পাকানোর কাজে, তাদেরও এখন নিজ দেশের তথ্য নিয়ে ব্যস্ততা। 

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে সরব কংগ্রেসসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তারা।

এই ওয়াকফ আইন পাশ হওয়া নিয়ে দেশের একাধিক রাজ্যে তৈরি হয়েছে বিক্ষোভ পরিস্থিতি। সম্প্রতি ওয়াকফ আইন নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিতে ময়দানে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস সারাদেশে ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। কংগ্রেস সংবিধানকে ক্ষমতা অর্জনের হাতিয়ার করে তুলেছে বলে মন্তব্যও করেন মোদী। 

দেশীয় রাজনীতির এ অবস্থার মাঝেও আশপাশে বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্তে সীমান্তে উৎপাত বাড়াতে কমতি করছেন না। বাংলাদেশ সীমান্তে আরো নজরদারি বাড়িয়েছে ভারত। এর জন্য সীমান্ত রক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহারও আরো জোরদার করা হয়েছে। এর ফলে আসামের ধুবড়ি সীমান্তে হ্যান্ড হেল্ড থার্মাল ইমেজার্স, রাতের অন্ধকারে ব্যবহারের জন্য নাইট ভিশন ডিভাইসেস, ইউএভি, সিসিটিভি-পিটিজেড ক্যামেরা, আইআর সেন্সর এবং কম্প্রিহেন্সিভ ইন্টিগ্রেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। সৌর আলো এবং অন্যান্য আলোর মাধ্যমে সীমান্ত অঞ্চল আলোকিত রাখা হয়েছে। নদী এলাকায় ভাসমান নৌকার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে। সংবেদনশীল অঞ্চলে প্রয়োজনীয় ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার করা হচ্ছে। একটা অন্যরকম ভাব।

এর মাঝে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারির জন্য মহাকাশে ৫২টি সামরিক সামরিক উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করতে চলেছে। মহাকাশভিত্তিক সম্পদের মাধ্যমে তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত উপগ্রহগুলো উৎক্ষেপণ করতে প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছেন ডিফেন্স স্টাফ প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান। এগুলো ভারতের সীমান্তে এলাকায় বিশেষ করে তথ্য সংগ্রহের কাজ করবে। এমনকি তাৎক্ষণিক ভাবেও প্রযোজনীয় সব তথ্য যোগাবে। 

জেনারেল চৌহান জানান, মহাকাশ একটি নতুন ক্ষেত্র হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। যা যুদ্ধক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করবে। নিজের চরকায় তেল না দিয়ে অন্যদের নিয়ে অতিখেলার পরিণতিতে ভারতকে এখন যুদ্ধ, আধিপত্য ইত্যাদি শব্দের চর্চা আরো বেশি করতে হচ্ছে। আবার নিজ দেশ সামলাতে গিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকেও বাড়তি চাপের সমান্তরালে তাপও নিতে হচ্ছে। অন্য দেশকে ঘায়েল করতে গিয়ে গুজব রচনার কাজ এখন নিজ দেশেও করতে হয়। এটি বৈজ্ঞানিক নিয়ম। প্রকৃতির নিয়মও। অতিখেলার পরিণামও।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন।

এমএ
Related topic   Subject:  উস্কানি   গুজব   ভারত  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close