রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী চরক পূজা ও মেলা। সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের প্রেমচোন ফকিরের বাড়ির পাশের মাঠে এই চরক পূজা ও গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এই মেলার মূল আকর্ষণ হলো পিঠে বড়শি গেঁথে চরকিতে ঘোরা। এই দৃশ্য দেখার জন্য স্থানীয়দের পাশাপাশি রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলা থেকে হাজারো মানুষ ভিড় করেন ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে।
গ্রামীণ আবহমান বাংলার ঐতিহ্য বহনকারী এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের খাবার ছাড়াও শিশুদের খেলনা ও গ্রামীণ তৈজসপত্র কেনার জন্য বহু মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন।
প্রতি বছর চৈত্র মাসের শেষ দিনে এই মেলা ও পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বিকেলের দিকে মূল পূজা শুরু হলে ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায়। চরক পূজার পাশাপাশি কালী, শীতলা ও বুড়ি দেবীর পূজাও অনুষ্ঠিত হয়।
এবার চরকিতে অংশ নেন জয় বিশ্বাস (২২) ও দেবদাস বিশ্বাস (২৪)। জানা যায়, পিঠে বড়শি গেঁথে চরকির সঙ্গে ঘোরার জন্য তারা এক বছর আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। আচার অনুযায়ী, এই পবিত্র রীতির জন্য তারা আগেই উপবাস থেকে আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
বহু মানুষ এই দৃশ্য দেখতে ভিড় করেন, অনেকের চোখে থাকে বিস্ময় ও আবেগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মেলায় আগত দর্শনার্থী জয়দেব শংকর বলেন, “আমি প্রতি বছরই এই মেলায় আসি। শরীরে বড়শি বিদ্ধ করে চরকিতে ঘোরানোর দৃশ্য শুনলেই গা শিউরে ওঠে। তবে নিজের চোখে দেখা এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আমাদের এলাকায় এমন ব্যতিক্রমী আচার দেখা যায় না।”
কামনা বিশ্বাস জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছেন এই ঐতিহ্যবাহী মেলা দেখতে। তার মতে, মেলার পরিবেশ আগের মতোই প্রাণবন্ত এবং এবারও নানা দোকানে মানুষকে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। অনেকেই শুধু বড়শি বিদ্ধ করে ঘোরার দৃশ্য দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন।
সুজিত কুমার দাস বলেন, “ছোটবেলা থেকেই এই পূজা দেখে আসছি। প্রতি বছর পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে আসি। এটা শুধু পূজা নয়, একটি সংস্কৃতি, যা হাজারো মানুষকে একত্রিত করে।” তিনি জানান, ভগবানের কাছে সবার মঙ্গল কামনাই এই পূজার মূল বার্তা।
মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাদল বিশ্বাস বলেন, “যেসব ভক্ত বড়শি বিদ্ধ করে চরকে অংশ নেন, তারা পূজার আগে এক সপ্তাহ উপবাস পালন করেন। এই মেলা রাজবাড়ী জেলার অন্যতম পুরোনো উৎসব, যা প্রতি বছর হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে।”
এসআই/আরএন