পহেলা বৈশাখের সকাল। সাত বছরের ছোট্ট জুঁই খাতুন পরেছিল নতুন জামা, চোখে কাজল, মুখে শিশুসুলভ লিপস্টিকের ছোঁয়া। মালয়েশিয়ায় থাকা বাবাকে ভিডিও কলে দেখিয়েছিল তার সাজ। বাবার মুখে ফুটেছিল গর্বের হাসি। মেয়ে বলেছিল, “দেখো বাবা, কেমন লাগছে আমাকে?”
বাবা-মেয়ের খুনসুটিতে মুখর ছিল সকালটা। মা পাশে বসে চুপিচুপি হাসছিলেন। কে জানতো, এটাই হবে শেষ কথা, শেষ দেখা!
সন্ধ্যায় বলল, পাশের বাড়ির দাদির কাছে যাবে। মা দরজায় দাঁড়িয়ে বললেন, “তাড়াতাড়ি ফিরে এসো মা।”
ফিরে আসেনি জুঁই, কিন্তু ফিরেছে তার ছোট্ট নিথর দেহটি।
১৫ এপ্রিল সকালে পাবনার চাটমোহরের রামপুর বিলে এক কৃষক ভুট্টা ক্ষেতে খুঁজে পান পোড়া মুখ, বিবস্ত্র এক ছোট্ট মৃতদেহ। গলায় প্যাঁচানো প্যান্ট, মুখে আগুনের দগদগে দাগ। শিশুটিকে আর চেনার উপায় ছিল না। তবু ছুটে যান মা, ছুটে যান স্বজনেরা—হাজার কান্না ভেদ করেও মা বললেন, “এ তো আমার মনি... আমার জুঁই...” বড়াইগ্রামের গাড়ফা গ্রামের সেই ছোট্ট মেয়েটিকে হয়তো পাশবিক নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তারপর মুখ পুড়িয়ে মুছে ফেলা হয়েছে পরিচয়ের চিহ্ন। মানুষ কীভাবে এতটা অমানবিক হতে পারে?
মা এখন পাথর হয়ে গেছেন। কথা বলেন না, শুধু জুঁইয়ের জামাটা বুকের কাছে চেপে ধরে কাঁদেন। বাবা ফোনের ওপারে নিঃশব্দ, কাঁপা গলায় বলেন, “আমি তো মেয়েকে ভালো রাখতে বিদেশে গিয়েছিলাম, ওকে তো এভাবে ফেরত পাবো ভাবিনি।”
এ এক করুণ চিত্র: আনন্দের দিনেই এক বাবার বুক ভেঙে খানখান, এক মায়ের কোল চিরদিনের জন্য শূন্য।
এত অল্প বয়সে কেন জুঁইকে এই নির্মম পরিণতি বরণ করতে হলো? সমাজ কি তার জবাব দেবে?
আজ পুরো এলাকা কাঁদছে। এ কান্না শুধু একটি শিশুর জন্য নয়, বরং সমাজের ভেতরে পচে যাওয়া ক্ষতচিহ্নের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্য। যে ক্ষত দেশবাসীকে কাঁদায়, কিন্তু কাঁদাতে পারে না দেশের এইসব অমানুষদের।
আরএন