চরফ্যাশনের ২০০ বছরের পুরনো ১৯নং বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচর। বঙ্গোপসাগর, মেঘনা, বুড়া গৌরাঙ্গা নদীর ভয়াল ছোবলে দিনের পর দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে এখানকার বসত-ভিটা, ফসলি জমি, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মৎস্য আড়ৎসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। চরের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন। কেউ কেউ বাপ-দাদার ভিটে সরিয়ে অন্য জায়গা চলে যাচ্ছেন। চরের মানুষ সরকারের কাছে থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা পায় না। তাদের নিজেরদ প্রচেষ্টায় চরের বাড়ি বাড়ি থেকে পলিথিনের বস্তা সংগ্রহ করে বস্তাতে বালি ভরে নদীতে ফেলছে। যাতে কিছুটা হলেও নদী ভাঙ্গা রোদ হয়। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়নটির মানুষের এমন দুঃসময়ে পাশে নেই অন্তর্বর্তী সরকার কোন প্রতিনিধি।
তীব্র ভাঙ্গনের কবলে পরে মূল দ্বীপের দুই-তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টি সম্পূর্ণ ও ২টি আংশিক তলিয়ে গেছে। বাকি জেগে থাকা অংশকে ঘিরেই এখানকার মানুষের জীবন সংগ্রাম আবর্তিত হচ্ছে। চরফ্যাসন উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় নদী পথে দুরত্ব ২৭ কি:মি:।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এলাহি মেম্বারের বাড়ি থেকে আনন্দবাজারের শেষ মাথা পর্যন্ত থেমে থেমে নদী ভাঙছে। গত কয়েক দিনে নদীগর্ভে চলে গেছে দুই থেকে তিন কিলোমিটার জায়গা। এতে কমপক্ষে ৭২টির বেশি পরিবার তাদের ঘর অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে। অনেকে খোলা জায়গায় বসবাস করছে। কেউ আবার দ্বীপ ছেড়ে ঘরের মালামাল ট্রলারে ভরে চরফ্যাশনের মূল ভুখন্ডে চলে যাচ্ছে।
দ্বীপজেলার এক তৃতীয়াংশ মৎস্য আয়ের উৎস হচ্ছে ঢালচর। নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন এখানকার ৩০/৪০ হাজার মানুষ। মাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বেকারত্ব দুর করার চেষ্টা চললেও এসব মানুষের স্বপ্ন আশা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে নদী ও সাগরের ভয়াবহ ভাঙন। ভাঙ্গণের তীব্রতায় আতংকে দিনাতিপাত করছে ঢালচরের জেলে পল্লীর বাসিন্দারা। ভাঙন রোধ কল্পে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পুরো ঢালচর বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। পুরো জনপদ ভেঙে গেলে তারা কোথায় আশ্রয় নেবে সে চিন্তায় দিশেহারা তারা।
গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা, সকিনা ও বিবি রাবেয়া বলেন, সবেমাত্র বর্ষা শুরু। এই মৌসুমেও আগের বছর নদীতে ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে যায়। বহু কষ্ট করে নতুন ঘর তুলেছি। কিন্তু এখন আবার ভাঙন চলছে। এখন আর কোথাও আশ্রয় নেওয়ার জায়গা নেই।
ঢালচরের বাসিন্দা সেকান্দার, নিরব, শাহে আলম বলেন, যেভাবে ভাঙন চলছে। এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে সাগরে বিলীন হয়ে যাবে পুরো ঢালচর।
ঢালচরের বাসিন্দা সবুজ বেপারি বলেন, ঢালচরকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে কিছুদিন আগে আমরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছি। কিন্তু আজও কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাই তারা উপায় অন্ত না দেখে নিজেদের আয়েজনে পলিথিনের বস্তা সংগ্রহ করে বস্তাতে বালি ভরে নদীতে ফেলছেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, “ঢালচরের নদী ভাঙন রোধকল্পে আপাতত কোনো প্রকল্প নেই। ভাঙনের মুখে পড়া স্থাপনাগুলো আমরা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছি।
এদিকে সহায় সম্বল হারিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা দিশেহারা ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষগুলো ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।