নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বারদী-শান্তির বাজার সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। পুরোটাই মরণফাঁদ। ওই এলাকায় চলাচলকারী লোকজনের ভোগান্তি চরমে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে একাকার হয়ে যায় রাস্তাটি। পানি জমে রাস্তা খানা খন্দ সৃষ্টি হয়। ফলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ হাজার হাজার মানুষ ও বারদীতে আসা পর্যটকদের যাতায়াতের পথ এটি। অথচ রাস্তা মেরামতে এখনও পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বৃষ্টি মৌসুমে রাস্তায় পানি জমে থাকায় যান চলাচল তো দূরে থাক, নিরাপদে হাঁটতেও পারেন না বাসিন্দারা। দেখার যেন কেউ নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ রাস্তাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ২৫ গ্রামের মানুষ চলাচলের অন্যতম প্রধান সড়ক রাস্তা। ফলে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজগামী সবাই এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। প্রতিদিন এ সড়কে কয়েকশ’ যানবাহন চলাচল করে। রাস্তার বেহাল দশার কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বারদী ইউনিয়ন একটি প্রখ্যাত স্থান। হিন্দু ধর্মাম্বলীদের তীর্থস্থান খ্যাত বারদীতে রয়েছে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম, সেই সাথে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের সাবেক মূখ্য মন্ত্রী জ্যোতিবসুর জন্মভিটা। সেই সূত্রে এ এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে নিয়মিত। মেঘনা নদীর ছটাকিয়া ঘাট ও এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বারদীর পূর্বাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের চরম ভোগান্তি আর কষ্টের কারন এখন এই বারদী শান্তির বাজারের রাস্তা। শুধু সোনারগাঁওয়ের বাসিন্দা ই নয়, এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আড়াইহাজার উপজেলার খাগকান্দা, উচিতপুরা, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের বাড়ৈপাড়া, কাকাইলমোড়া, নয়নাবাদ, বাহেরচর, চম্পকনগর, তেতৈতলা, লালুরকান্দি, তাতুয়াকান্দা, নয়াপাড়া, খাগকান্দা, মধ্যারচর এমনকি চৌদ্দ মৌজার লোকজনও। প্রতিদিন হাজার হাজার লোকজনের যাতায়াতের জন্য শত শত যানবাহন এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। শান্তির বাজার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বেশ প্রসিদ্ধ হওয়ার কারনে এ বাজারে নিয়মিত ট্রাক, পিকআপভ্যান যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া সিএনজি, অটোরিকশা, রিকশা, বাইক, প্রাইভেটকার সহ নানাবিধ যানবাহনের চলাচল তো রয়েছেই।
বারদীর পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গোয়ালপাড়া হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক দেওয়ান সামছুর রহমান জানান, উপজেলার পাইকপাড়া, গোয়ালপাড়া, চেঙ্গাকান্দী, নাকুরিয়াহাটি, জয়নগর, খাসেরকান্দী, মান্দারপাড়া, বাস্তমবাগ, মছলন্দপুর, সেকেরচর, দলরদী, আলগীরচরসহ প্রায় ২৫ টি গ্রামের লোকজনকে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় এ রাস্তা দিয়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় এমনভাবে পানি জমে যেনো নৌ চলাচলের উপযোগী। এ রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে খুবই কষ্ট হয়। মহিলা, বয়স্ক ও রোগীদের জন্য এ রাস্তা একটি আতংকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি দ্রুত এ রাস্তা সংস্কারের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
গোয়ালপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনই আমাদের এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। বৃষ্টিতে রাস্তাটি একদম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে প্রতিদিনই কোন না কোন যানবাহন রাস্তায় উল্টে যায়। তারপরও শত ভোগান্তি নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি দ্রুত এ রাস্তা মেরামত করার ব্যবস্থা করেন।
মুসলেন্দপুর গ্রামের আবু ইউসুফ জানান, উপজেলা প্রশাসনের যে কোনো কাজে, থানা, ভূমি অফিস, জেলা প্রশাসনের কাজে যোগাযোগের জন্য অত্র অঞ্চলের জন্য এই একটি মাত্র রাস্তাই রয়েছে। তাছাড়া ঢাকার অতি সন্নিকটে হওয়ার কারনে অনেকেই বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করে অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালায়। ফলে প্রতিদিনই তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
চেঙ্গাকান্দি গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারন করে। এ রাস্তার আশেপাশে গোয়ালপাড়া হাইস্কুলসহ বেশ কয়েকটি প্রাইমারি স্কুল, কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের কলেজ যাতায়াত ও এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রেও যেতে হয় এ রাস্তা দিয়ে।
স্থানীয় বারদী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল বলেন, এ রাস্তাটির বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই রাস্তাটির মেরামত করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সোনারগাঁও উপজেলা প্রকৌশলী মো. আলমগীর চৌধুরী বলেন, বেহাল সড়কগুলো তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ সড়কটিও তালিকায় রয়েছে। অর্থ ছাড় পাওয়া গেলে সেগুলো সংস্কার করা হবে।
এসআর