মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে ভুট্টার ক্ষেতগুলো ভালো হয়েছে দেখে কৃষকদের মন খুশিতে ভরে গেছে। ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি বছর ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ভুট্টা চাষিরা আশা করছেন।
ধান ও গমের পাশাপাশি এ উপজেলার কৃষকার এখন ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। আর বিশেষ করে ভুট্টা চাষে স্বল্প সময়ে অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায় দেখে এ অঞ্চলের কৃষকেরা ধান ও গম চাষের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েন। আর এভাবে দিনদিন সবার মাঝে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েই চলেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প সহ আরও কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে কমলগঞ্জ উপজেলায় ৭০ জন কৃষক ভুট্টা চাষের জন্য প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। এ উপজেলায় ৩২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২০ মেট্রিকটন।
কৃষকরা জানান, গত বছর বাজারে ভুট্টার দাম বেশি থাকায় অধিক লাভবান হয়েছেন। এ কারণে প্রণোদনা কর্মসূচির বাইরেও অনেক কৃষক তাদের জমিতে এ মৌসুমে ভুট্টার আবাদ করেছেন। এছাড়াও ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি ও ফলন ভালো করতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কাটাবিল গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির। তিনি জানান, উপজেলা কৃষি কার্যালয় হতে প্রনোদনা পেয়ে চলতি মৌসুমে ৩০শতাংশ জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। ভুট্টার গাছে গাছে ফুল ও ফল এসেছে। মাস খানেক সময়ের মধ্যে ভুট্টা উত্তোলন করতে পারবেন। ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, আমার খরচ হয়েছে ১০হাজার টাকার মতো। খরচ বাদে ৩০ হাজার টাকা আয় হবে।
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক খাজা মিয়া জানান, ডিসেম্বরের দিকে বীজ বপনের পর ১০ দিনের মধ্যেই অঙ্কুরোদ্গম হয়। এরপর নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। সাধারণত সাড়ে চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। বর্তমানে তার জমির গাছে মোচা আসতে শুরু করেছে, আর এপ্রিলের শেষ দিকে ফলন আসবে বলে আশা করছেন তিনি।
সিদ্বশ্বরপুর গ্রামের কৃষক দেবাশীষ পাল জানান, ফলন বাম্পার হয়েছে যদি খড়া না হতো আরো বেশী ফলন হতো। রামচন্দ্রপুর গ্রামের মশাহিদ মিয়া ও ছনু মিয়া জানান, ভুট্রা চাষ আমাদের এদিকে আগে এরকম দেখা যায়নি ৩/৪ বছর যাবত ফলন ভাল হচ্ছে দেখতেও সুন্দর লাগছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অপন পাল জানান, ‘বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর থেকে প্রায় ৯০ দিন পর্যন্ত চার দফা সেচ দেওয়া প্রয়োজন হয়। মাঝে মাঝে পাতার দাগ, মোচা বা দানা পঁচা, কান্ড পঁচা ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে, যা ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগে দমনযোগ্য। সঠিক পরিচর্যায় কম পরিশ্রমে দ্বিগুণ লাভের সম্ভাবনা রয়েছে ভুট্টা চাষে। রহিমপুর ইউনিয়নে ৬ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জয়েন্তা কুমার রায় বলেন, ‘ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম কিন্তু দাম অনেক ভালো। সেই সঙ্গে ভুট্টার গাছ গো-খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে বাজারে ভুট্টার চাহিদাও অনেক বেশি। ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় ভুট্টার রোগ-পোকমাকড় দমন ও অধিক ফলনের জন্য কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।’
এসআর