মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বড় ও গুরুত্বপূর্ণ হাট শমশেরনগর কাঁচা বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলে চা বাগানের ঝিলের পানি প্রবাহের নালার মুখ বন্ধ হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। ময়লা আবর্জনায় নালার মুখ বন্ধ হওয়ায় মাছ বাজারসহ বাসা বাড়ির ময়লার কালো পানি রাস্তার উপরে চলে আসছে। ফলে এসব ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন শিক্ষার্থী, মসজিদের মুসল্লী ও সাধারণ মানুষ। নালার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্ব ইজারাদারের হলেও নতুন ও পুরাতন ইজারাদারের ঠেলাঠেলিতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার শমশেরনগর। এখানে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার কমপক্ষে ২৫টি ইউনিয়নের মানুষ এ বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার করেন। ফলে এখানকার কাঁচাবাজার ব্যস্ত থাকে। শমশেরনগর কাঁচা বাজারের সমূহ ময়লা এখানে ফেলা হয়। শমশেরনগর-কমলগঞ্জ সড়কের আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী চা বাগানের ঝিলে। প্রতিদিন ময়লা আবর্জনা ফেলে এ ঝিলের পানি প্রবাহের দেয়ালের বাহিরের ও ভিতরের নালার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। গত টানা কয়েক মাস খরা ও অনাবৃষ্টি থাকায় ঝিল শুকিয়ে যায়। তবে দেয়ালের বাহিরের অংশ দিয়ে মাছ বাজারসহ আবাসিক এলাকার বাসা বাড়ির ময়লা পানি প্রবাহিত হয়। নালার মুখ বন্ধ থাকায় বাজারের নালার কালো ময়লা পানি এখন রাস্তা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এ অবস্থায় এ পথে চলাচলকারী স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, মসজিদের মুসল্লী ও সাধারণ মানুষজন ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। অনেক সময় এ পথে চলাচলকারী দ্রুতগামী যানবাহনের চাকায় ময়লা পানি মানুষজনের গায়ে ছিটকে পড়ে।
হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরে আলম সিদ্দিক বলেন, ‘তার স্কুল এখন এসএসসি পরীক্ষা চলছে। নালার মুখ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তার ময়লা পানি মাড়িয়ে কেন্দ্রে আসছে।’
আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক আইনুন নিশাত বলেন, ‘গত বছরও ভরা বর্ষায় এ নালার মুখ বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে হয়ে ঝিলের পানি তাদের স্কুলে ও আশাপাশের বাসা বড়িয়ে উঠেছিল। পরে এলাকাবাসী মিলে নালার মুখ পরিষ্কার করলে আবারও নালায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ হলে পানি নেমে যায়।’
শমশেরনগর চা বাগান ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী বলেন, ‘বাজারের ময়লা আবর্জনা ও ঝিলের পানি প্রবাহের কারণে নালার মুখ বন্ধ হয়। চা বাগানের বিভিন্ন টিলার বৃষ্টির পানি নেমে এ নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখন নালার মুখ না খুলে দিলে ঝিলের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে চা প্লান্টেশন এলাকায় পানি প্রবেশ করবে।
তিনি আরও বলেন, গত এক সপ্তাহে দুই বার চা বাগান থেকে এ নালার মুখ পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে দেয়ালের বাইরের অংশের নালার মুখ জুড়ে রাস্তার জমি দখল করে কিছু অবৈধ দোকান স্থাপন করায় তারা আরও আবর্জনা পরিষ্কার করতে পারেননি।
শমশেরনগর বণিক কল্যাণ সমিতির অর্থ সম্পাদক জাহিদ আলী বলেন, ‘বাজারের নালার পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব বাজার ইজারাদারের। তারা কেন নালা পরিষ্কার করছেন না তা বুঝতে পারছেন না। এ অবস্থায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় তিনিও নিজ উদ্যোগে ইজারাদারকে তাগাদা দিয়েছেন এ নালার মুখ পরিষ্কার করে দিতে।’
শমশেরনগর বাজার ইজারাদার আসাইদ মিয়া বলেন, ‘তিনি ৭২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছেন। মাত্র ৪/৫ দিন হলো তিনি বাজারের দায়িত্ব নিয়েছেন। আগের ইজারাদার নালা নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখেনি বলে এ ময়লা আবর্জনার স্তুপ হয়েছে। আগের ইজারাদাররা এ ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। এ দায়িত্ব তার নয়। এ ঠেলাঠেলিতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন মানুষ।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর এ সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন এসে এ সমস্যা দেখেছেন। তিনি শমশেরনগর ইউনিয়নের চারজন সদস্যকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ইজারাদারকে নিয়ে বসে এ সমস্যার সমাধান করে দিতে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টায় দেখা যায় মাঝ পথে নালার ময়লা কালো পানি রাস্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইজারাদার এখন ও নালা পরিষ্কার করে নি? এ প্রসঙ্গে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এখনই ইউপি সদস্যদের ও ইজারাদারকে ডেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এসআর