লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগর গ্রামের সবচাইতে বয়স্ক বৃদ্ধা শতবর্ষী জোহরা বেগম। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ৫৮ বছর আগে। বয়সের কারণে নানা রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে। তিনি বর্তমানে বয়স্ক, বিধবা ভাতা কোনটাই পান না। বয়সের ভারে নিজে হাটতে পারেন না। লাঠিতে ভর করে অন্যের সহযোগিতায় ঘরের বাহিরে বের হয়। শরীরের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে, কানেও শুনে কম, চোখেও কম দেখেন। জোহরা বেগম তিন মেয়ে ও এক ছেলের মা। ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয়েছে। জোহরা বেগমের ছেলের নাম আইজুল শেখ। তিনি দুই বিয়ে করেছেন। তিনি সফুরা খাতুন নামের এক স্ত্রীকে নিয়ে পাশ্ববর্তী হাতীবান্ধা উপজেলায় থাকেন। তিনি মায়ের ভরণপোষণ দেন না।
জোহরা বেগমের আরেক পুত্রবধু জরিনা বেগম অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে তাকে লালন-পালন করেন। তার নাতী পাশান আলীর বয়স ৪৮ বছর হলেও নানীর (জোহরা বেগম) বয়স জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৩৫ বছর। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৩৫ বছর বয়স হলেও তার বিধবা ভাতা হওয়ার কথা থাকলেও তিনি কোন ভাতা পাচ্ছেন না। মেয়ে জমিলা বেগম বিধবা ভাতা পেলেও জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুল থাকায় বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না মা জোহরা বেগম। এই নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা সমালোচনা।
পুত্র বধু জরিনা বেগম বলেন, আমার শ্বাশুড়ীর বয়স একশত বছর পার হয়ে গেছে। আমার অভাবী সংসার। আমার স্বামী আরেক স্ত্রীকে নিয়ে অন্য জায়গায় থাকে। আমি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে শ্বাশুড়িকে লালন-পালন করি। বর্তমানে তিনি বয়স্ক ভাতাও পায়না, বিধবা ভাতাও পায়না। পাটগ্রাম সমাজসেবা কার্যালয়ে অনেক বার গিয়েছি। তারা বলে ভাতা পাবে কিন্তু পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বৃদ্ধার নাতী পাশান আলী (৪৮) বলেন, নানীর বয়স্ক ভাতা ছিলো। জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কম থাকার কারণে অনলাইনে ২০২০ সালে বাদ হয়ে যায়। বয়স্ক ভাতা বাদ হলেও তিনি বিধবা ভাতা পাওয়ার কথা কিন্তু পরবর্তীতে অসংখ্যবার পাটগ্রাম সমাজ সেবা অফিসে এ বিষয়ে গিয়েছে। তারা ভাতা পূনরায় করে দিতে চাইলো ভাতা এখন পর্যন্ত হয়নি।
এ দিকে একই ইউনিয়নের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা রেজিয়া বেগম। সোজা হয়ে হাটতে পারে। বয়সের ভারে শরীর ন্যুজ হয়েছে। গত ৩৩ বছর পূর্বে স্বামী আবজাল হক মারা গেছেন। অভাবের কারণে এরপর থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। তাঁর দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। তারা বিয়ে করে বউ নিয়ে অন্যত্র রয়েছে। মায়ের ভরণ-পোষণ কেউ দেয়না। বয়সের ভারে সোজা হয়ে চলতে না পারলেও বিধবা বা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না তিনি।
এ বিষয়ে বৃদ্ধা রেজিয়া বেগম বলেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। এখন বয়সের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারিনা। বয়স্ক বা বিধবা ভাতাও পাচ্ছি না। আমার বয়স ৭০ বছরের মতো। ভোটার আইডি কার্ডে বয়স কম থাকার কারণে আমার বয়স্ক ভাতা বাতিল হয়েছে। পরবর্তীতে প্রতিবেশি পরশ আমার বিধবা ভাতার আবেদন করে দেন। পাটগ্রাম সমাজসেবা অফিস অনেকবার গিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
প্রতিবেশি মাহবুবার রহমান সোয়েব বলেন, আমার প্রতিবেশি রেজিয়া বেগম মানবেতার জীবন-যাপন করতেছে। তার বয়স প্রায় ৭০ বছর। তার দুই ছেলে তারা বউ নিয়ে বাহিরে থাকে। তিনি আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে কাজের সহযোগিতা করে খাবারের কোন রকম ব্যবস্থা করেন। বৃদ্ধ বয়সে অভাব অনটনের সংসারে তাঁর যদি একটি বিধবা বা বয়স্ক ভাতা ব্যবস্থা হলেই ভালো হতো।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুর মোর্শেদ খাঁন বলেন, জানতে পেয়েছে অনেক ব্যক্তির বয়স বেশি কিন্তু ভোটার আইডি কার্ডে বয়স কম। তাদের এ রকম ক্ষেত্রে নির্বাচন অফিসে গিয়ে প্রমাণ পত্র দিয়ে বয়স ঠিক করতে হবে। ইতিমধ্যে যাদের বয়স হয়ে গেছে, বয়স্ক ভাতা হচ্ছে না। জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কম তারা যদি বিধবা হন বিধবা ভাতার আবেদন করতে পারবে। যদি কেউ বয়স্ক বা বিধবা আবেদন করে থাকেন। ভাতা হওয়ার পরেও ভাতার টাকা পাচ্ছেন না তাহলে অব্যশই তাঁর মোবাইল নম্বরের সমস্যা আছে। আর যারা ভাতা হওয়ার পরও টাকা পায়না তারা জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বরসহ অফিসে এসে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। সমস্যা কোথায় রয়েছে আমরা খুঁজে বের করে সমাধান করবো।
এসআর