ঝালকাঠির নলছিটিতে লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক পোল্ট্রি ফার্ম। খামারিরা জানিয়েছেন, ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার অত্যধিক দাম ও খাবারের অস্বাভাবিক দামের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছেন অনেক খামারী। তাই বাধ্য হয়ে ফার্ম বন্ধ করে দিচ্ছেন। উৎপাদন খরচ না উঠায় খামারের শ্রমিকদের মজুরি দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। একইসঙ্গে মুরগির বিভিন্ন ওষুধের দামও বেড়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, উপজেলায় গত বছর থেকে ২০টি ফার্ম বন্ধ হওয়ার তথ্য থাকলেও চলতি বছরের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
তবে পোল্ট্রি ব্যবসার সাথে জড়িতরা জানিয়েছেন, উপজেলায় এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৫০টিরও বেশি ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের সেলিম খান নামের একজন খামারী জানান, আমার গত চালানে এক হাজার মুরগিতে ৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। মুরগির বাচ্চার দাম ও খামারের দাম মিলে প্রতি কেজিতে আমাদের খরচ হয় ১৫০/১৬০ টাকা। কিন্তু মুরগি বিক্রি করতে হয়েছে ১২৫/১২৫ টাকা কেজি। এতে আমার অনেক লোকসান হয়েছে।
তিনি জানান, তার ডিলার তার কাছে আগেও টাকা পেত। এখন লোকসান হওয়ায় তার পক্ষে আর ব্যবসা চালিয়ে নেয়া সম্ভব হচেছ না।
কবির সিকদার নামের আরেক খামারী জানান, সিন্ডিকেট করে মুরগির বাচ্চার দাম হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া খাবারের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচও উঠে না এরপর আবার শ্রমিকের বেতন দিতে হয়। আবার ওষুধের দাম গত বছর থেকেই বেশি। যে ওষুধটা বাজারে কম থাকে প্রয়োজনীয় সময় সেগুলোর দাম আবার আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। আমি ইতিমধ্যে চারটি ফার্ম বন্ধ করে দিয়েছি। এখন দুটি চালু আছে কিন্তু ক্রমাগত লোকসান হলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। আমরা চাই কতৃপক্ষ যেন এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। কারণ দেশের লক্ষ লক্ষ লোক এখন এই পোল্ট্রি ব্যবসার সাথে জড়িত।
সিকদার পোল্ট্রি ফিড এন্ড মেডিসিনের পরিচালক মো. মাসুম সিকদার জানান, কিছু অসাধু কোম্পানির সিন্ডিকেটের কারণে পোল্ট্রি খাত ধ্বংসের পথে রয়েছে। তারা আমাদের কাছে বাচ্চা বিক্রি করে ৭০/৮০ টাকা আবার সেই বাচ্চাই তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ফার্মে বিক্রি করে ৩০ টাকা। এ কারণেই প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
তিনি আরও জানান, করোনার অজুহাতে যে খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে সেটা এখন পর্যন্ত কমানো হয়নি। আসলে এই খাতে সরকারের যে সকল কর্মকর্তা আছেন তাদের উদাসীনতার কারণে আমাদের ব্যবসা এখন বন্ধ হওয়ার পথে। সাথে অনেক খামারীরাও লোকসান দিয়ে পথে বসেছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু সালেহ ইফাদ ইশতিয়াক জানান, বাচ্চার দাম ও খামারের দাম বৃদ্ধির কারণে এখানে অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তৎপরতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সাথে যোগাযোগ রাখছে।
এসআই/এমএ