বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ব্রি-১০৫ জাতের ধান চাষ হয়েছে। পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ এই জাতের চালে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ তুলনামূলক কম হওয়ায় একে ‘ডায়াবেটিক ধান’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ফকিরহাটে এ বছর অন্যান্য ধানের পাশাপাশি ব্রি ধান-১০৫, যাকে ‘ডায়াবেটিক রাইস’ বলা হচ্ছে, একজন কৃষক চাষ করেছেন। তাকে কৃষি বিভাগ থেকে নানা পরামর্শ ও সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি-১০৫ জাতের ধানের প্রতি ইতোমধ্যে কৃষকরা ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। পাশাপাশি পুষ্টিমান বেশি হওয়ায় বাজারেও এর কদর ও মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলার পিলজংগ গ্রামের কৃষক মাহমুদ সরদার চলতি বোরো মৌসুমে ফকিরহাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তা এবং "প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার)" প্রকল্পের আওতায় এক একর জমিতে ব্রি-১০৫ জাতের ধান চাষ করেছেন। ধান রোপণ থেকে শুরু করে পরিচর্যা ও সেচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তার মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তিনি এখান থেকে ৭১ মণ ফলন পেয়েছেন। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে চাহিদা থাকায় তিনি কিছু চাল ও ধান বিক্রি করবেন। এছাড়া পরবর্তী মৌসুমের চাষের জন্য নিজে কিছু বীজ সংরক্ষণ করবেন এবং অন্যান্য কৃষকদের কাছেও বিক্রি করবেন। তিনি আশা করছেন, এই জমি থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় হবে, যা সাধারণ ধানের চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক।
পিলজংগ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা জানান, কৃষককে বীজ, সার, কিটনাশক প্রদানসহ সকল প্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়েছে। ধান খুব ভালো হয়েছে এবং কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক তদারকি করেছে।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন জানান, ব্রি ধান-১০৫ এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) ৫৫-এর নিচে হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীরাও এই ধানের চাল খেতে পারেন। এতে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭ শতাংশ হওয়ায় এই চালের ভাত ঝরঝরে হয়। প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে অন্যান্য চালের তুলনায় এই চালের ভাত অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। এছাড়া ব্রি ধান-১০৫ পেকে গেলেও পাতাগুলো সবুজ থাকে, সহজে হেলে পড়ে না এবং রোগবালাইয়ের আক্রমণও তুলনামূলকভাবে কম, ফলে কম বালাইনাশকে এটি চাষ করা যায়।
বাগেরহাট খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, “দেশের কৃষিখাতে নতুন প্রযুক্তি ও বৈচিত্র্য আনার প্রয়াসে এই ধরনের পরীক্ষামূলক উদ্যোগ সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়। কৃষক মাহমুদ সরদার সফল হওয়ায় আগামী মৌসুমে এই ধান ফকিরহাটসহ আশপাশের উপজেলায় ব্যাপক পরিসরে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।”
এএ/আরএন