সুনামগঞ্জে হাওরে ধান কাটার জন্য বরাদ্দ পাওয়া একটি কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিন দুই কৃষকের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে সরকারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ভর্তুকি আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। এই ঘটনায় জড়িত রয়েছে যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির স্থানীয় কর্মকর্তারা এবং কৃষি বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারী। এ নিয়ে জেলায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সরবরাহ করা ১৩ ও ১৬ ডিএসিডিওএনজি নম্বরের দুটি কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিন ২০২২ সালের ১৬ জুন, অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই বিতরণ দেখানো হয়। এর একটি যন্ত্র বরাদ্দ দেওয়া হয় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোলেরগাঁও গ্রামের কৃষক আব্দাই মিয়ার নামে। যদিও বিতরণের ক্ষেত্রে কোনও লিখিত চুক্তি হয়নি, বরং শুধুমাত্র লোক দেখানোভাবে হস্তান্তর দেখিয়ে যন্ত্রটি অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
যন্ত্রটি প্রকৃত মালিকের কাছে না দিয়ে দেওয়া হয় শান্তিগঞ্জ উপজেলার কাইক্যারপাড় গ্রামের কৃষক মসদ্দর আলীর কাছে। কোম্পানির সেলস ম্যানেজার মিনহাজ আহমদ, রিকভারি অফিসার আতিকুর রহমান আতিক এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান এ কাজে সহায়তা করেন।
বন্যার অজুহাত দেখিয়ে যন্ত্রটি হস্তান্তর না করে নিজেরাই রেখে দেন এসকিউ কম্পানির কর্মকর্তারা। এরপর দুইজন কৃষকের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ভর্তুকি তুলেন তারা।
প্রকৃত মালিক কৃষক আব্দাই মিয়া বারবার যন্ত্র ফেরত চাইলেও তাকে ঘুরাতে থাকে কোম্পানির লোকজন। এক পর্যায়ে তিনি হাল ছেড়ে দেন এবং লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা কৃষি অফিসে। তবে শুনানি হলেও কোনও সুরাহা হয়নি।
সম্প্রতি কৃষি বিভাগ যন্ত্রের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারে এবং আব্দাই মিয়াকে যন্ত্রটি ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়। এরপর তার ভাই শাহ আলম দিলোয়ার বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে গত ২৩ এপ্রিল সাক্তারপাড়া গ্রাম থেকে যন্ত্রটি উদ্ধার করেন।
এদিকে প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ পেলে শাহ আলম দিলোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে শাহ আলম বলেন, “আমার ভাইয়ের নামে যন্ত্র বরাদ্দ ছিল, কিন্তু তারা অন্যত্র দিয়ে দিয়েছে। এখন আমি উদ্ধার করায় আমার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে মসদ্দর আলীর ছেলে আব্দুল হামিদ অভিযোগ করে বলেন, “বন্যার এক বছর পর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরনো নষ্ট যন্ত্র দেয়, পরে বাধ্য হয়ে তা গ্রহণ করি। যন্ত্রটি এখন ফেরত দেওয়া হয়েছে।”
কোম্পানির সেলস ম্যানেজার মিনহাজ আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি যন্ত্র বিতরণের বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, “দীর্ঘদিন ওই কৃষককে ভর্তুকি ফেরতের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পরে যন্ত্র উদ্ধার করে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়।”
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা আজাদ বলেন, “ঘটনাটি সম্পর্কে আমি অবগত। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা ঊর্ধ্বতন মহলে রিপোর্ট করব।”
এসডি/আরএন