‘কোটিপতি’ কথাটি শুনতেই বেশ ভালো লাগছে। ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি এখন কোটিপতি! শুনে অনেকের হিংসাও লাগছে, আবার তার ভক্তদের ভালো লাগছে। তবে এই কোটিপতি কিন্তু টাকায় নয়। তিনি দর্শকদের ভালোবাসাকে স্পর্শ করেছেন। আর নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন হিমি।
আর দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ১০৯টিরও বেশি নাটক। হিমি অভিনীত ১০৯টি নাটকের প্রতিটি ১ কোটি ভিউ অতিক্রম করেছে। এ সাফল্যে সহশিল্পী থেকে শুরু করে ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন সময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। কাজ ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি বলেন, ভিউ হিসেব করে কাজ করা হয় না—কোনটির কত ভিউ হয়েছে, তা ভাবি না। মন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যখন জানতে পারি সব নাটকের ভিউ কোটি অতিক্রম করেছে, শুনে ভীষণ ভালো লেগেছে।
তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একজন শিল্পীর জন্য দারুণ আনন্দের। সেই সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণাও বাড়ায়। ভালো কাজের ক্ষুধা বাড়ায়। সহকর্মী থেকে শুরু করে ভক্তরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন—বেশ উপভোগ করছি।
ছোট পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী বলেন, সবাই বিষয়টি নিয়ে বেশ আনন্দিত। সহকর্মীরা ফেসবুকে পোস্ট করছে—দেখে আরও ভালো লাগছে। সবার ভালোবাসায় দায়িত্ব বেড়ে গেছে। সামনে আরও ভালো ভালো কাজ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব।
চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী বলেন, কখনো চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করা হয়নি। নিজের জায়গা থেকে সবসময় সর্বোচ্চ ভালো করার চেষ্টা করি। দর্শক পছন্দ করেছেন বলেই সব নাটক কোটি ভিউ অতিক্রম করেছে।
হিমি বলেন, কাজ করার আগে কখনো ভিউয়ের কথা মাথায় রেখে কাজ করিনি। ভিউ আমাদের হাতে থাকে না। সবসময় সেরাটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। ভিউ নির্ভর করে দর্শকের উপর। তাদের ভালো লাগলেই কোটি ভিউ হয়। সবকিছু তাদের হাতে। আমি নিজের জায়গা থেকে মন দিয়ে কাজ করি।
তর্ক-বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাটকের ভিউ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে—এটি ঠিক। অস্বীকার করা যাবে না। আমার কিছু কাজের ভিউ বেশি হয়েছে, আবার কিছু কাজের ভিউ কম হয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দুটোই হয়।
হিমি আরও বলেন, এটিকে একমাত্র মানদণ্ডে বিচার করা যাবে না। এখানে অনেক বিষয় কাজ করে। কাজ ভালো হয়েছে বা খারাপ হয়েছে—সব ধরনের প্রতিক্রিয়া পাই। কিছু কাজের চরিত্র চ্যালেঞ্জিং থাকে। সেই দিক থেকে বর্তমানে ভিউ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা অর্থ লগ্নি করেন, ভিউ বেশি হলে তাদের অর্থ উঠে আসে। অর্থ উঠে এলে প্রযোজকরা নতুন করে লগ্নিতে আগ্রহী হন। সবকিছু বিবেচনায় ভিউ এখন মুখ্য।
ব্যস্ততা প্রসঙ্গে এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী বলেন, কোরবানির ঈদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। দুই ঈদের মধ্যে সময় কম পাওয়া যায়। সেই দিক থেকে এখন কাজের চাপ একটু বেশিই। যার কারণে মাঝে মাঝে মধ্যরাত পর্যন্ত শুটিং করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, গতানুগতিক কাজ থেকে ঈদের কাজগুলো ব্যতিক্রম করার চেষ্টা থাকে সবার। সে কারণে কষ্টটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। ঈদের নাটকের জন্য নতুন একটি জায়গায় শুটিং করেছি, যেখানে এর আগে শুটিং হয়নি। দর্শকদের কথা মাথায় রেখে লোকেশনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। চাঁদরাত পর্যন্ত কাজ করব। আগের কিছু কাজ করা আছে, সেগুলোও ঈদ আয়োজনে প্রচার হবে।
‘পিঞ্জর’ নাটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমবার আদিব হাসানের পরিচালনায় কাজ করেছি। ‘পিঞ্জর’ নামের এ নাটকে আমার সহশিল্পী নিলয় আলমগীর ভাই। বড় পরিসরে কাজটি হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা মিলিয়ে তিন দিন নাটকটির শুটিং করেছি।
ছোট পর্দার এই অভিনেত্রী বলেন, বড় প্রজেক্ট বলেই বেশ যত্ন নিয়ে কাজটি হয়েছে। সবসময় যে কাজ করি, এটি তার থেকে একেবারে আলাদা। লোকেশনে একেবারে ভিন্নতা আছে। ফিল্মি ধাঁচে নাটকটি নির্মিত হয়েছে।
চরিত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড়লোক বাবার আদরের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এখানে নিলয় ভাই লাশবাহী গাড়ি চালান। গল্পের শুরুটা ট্র্যাজেডি দিয়ে। আমার দুই ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বড়দা মিঠু ও শিবা শানু ভাই। ফিল্মি স্টাইলে কাজটি হয়েছে। আশা করছি, নাটকটি প্রচারে এলে দর্শক পছন্দ করবে।
লেট নাইট শুটিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লেট নাইট শুটিং করায় আমার তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। নিজে সবকিছু একা হাতে করতে হলে হয়তো কষ্ট হতো। আমার সবকিছু মা করে দেন। সে জায়গা থেকে সহযোগিতা পাই।
তিনি আরও বলেন, টিম থেকেও সহযোগিতা পাই। বাবা শুটিংয়ে দিয়ে যান। এই কারণে আমার সেভাবে অসুবিধা হচ্ছে না। আমার জন্য বাবা-মায়ের কষ্ট হয়। তবে ক্রিয়েটিভ কাজ গৎবাঁধা সময়ের মধ্যে সম্ভব নয়। ৯টা-৫টা চাকরি হলে সময় মেইনটেইন করা যেত। কিন্তু এখানে সেটা সম্ভব না।
হিমি বলেন, ক্রিয়েটিভ কাজে অনেক বিষয় জড়িত থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, কাজ করতে করতে ভালো করার জন্য টিম বসে গল্পে পরিবর্তন আনে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সেটে কাজ করা হয়।
তিনি বলেন, সে কারণেই না চাইলেও লেট নাইট শুটিং হয়ে যায়। নাটকের বাজেট বাড়লে আর অসুবিধা হবে না। যদিও এখন আগের তুলনায় বাজেট বেড়েছে। অনেক কাজেই আগের চেয়ে ভালো বাজেট পাই। আর একটু যদি বাজেট বাড়ে, তাহলে হয়তো আরও ভালো কাজ করা যাবে। বাজেট বাড়লে ভালো করার তাড়নাও থাকবে। ৪০ মিনিটে একটা গল্প বলা কঠিন।
বড় পর্দা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন বড় পর্দা নিয়ে ভাবছি না। আর সেরকম সিনেমার প্রস্তাবও আমার কাছে আসে না। ভালো সিনেমা দেখলে মনে হয়—এখানে যদি আমি থাকতাম! তখন খুব আফসোস হয়।
তিনি আরও বলেন, যখন ভালো সিনেমার প্রস্তাব আসবে, তখন ভেবে দেখব। আপাতত নাটকেই খুশি। কারণ, এখানে অনেক অনেক চরিত্র করা যায়। খুব সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়।
পছন্দের চরিত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব সময় প্রিয়ডিক্যাল গল্প পছন্দ। ছোটবেলায় ‘হঠাৎ দেখা’ নামের একটি সিনেমা করেছিলাম। এটি দিয়ে শখ অনেকটাই পূরণ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতা অবলম্বনে এটি নির্মিত হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, সামনে এমন কাজ পেলে ভালো লাগবে। আমি মূলত এরকম কাজই করতে চাই। আশি-নব্বই দশকের চরিত্র আমাকে খুব টানে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন নতুন চরিত্রে মেলে ধরতে চাই।
নাটক কেমন হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের নাটক এখন খুবই ভালো হচ্ছে। দর্শক নিজে থেকেই নাটক দেখছেন। সামনে আরও ভালো হবে। আমরাও ব্যতিক্রম কাজ দেওয়ার চেষ্টা করছি। গল্প থেকে শুরু করে চরিত্র, লোকেশন—সবকিছুতে এখন নতুনত্ব থাকছে। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভালো কিছু করার চেষ্টা থাকে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের নাটক ভালো হচ্ছে। আগের চেয়ে বাংলা সিনেমাও ভালো হচ্ছে।
আরএন