নেত্রকোণার পূর্বধলায় এক গৃহবধূকে (১৮) শ্লীলতাহানীর অভিযোগে ছাত্রদল নেতা মো. সালমান রহমান পল্লবকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বুধবার সন্ধ্যায় এ বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়।
নেত্রকোণা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহাবুব চৌধুরী এ তথ্য জানান।
বহিষ্কৃত সালমান রহমান পল্লব পূর্বধলা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি উপজেলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নের গোহালাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা।
বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।
একইসঙ্গে সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি বহিষ্কৃত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক যোগাযোগ না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এদিকে, শ্লীলতাহানীর এ ঘটনায় হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা গ্রামের হাফেজ মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম মাদানী বুধবার রাতে পূর্বধলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে এই ন্যাকারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে শ্লীলতাহানীর ঘটনার সাথে জড়িত পূর্বধলা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সালমান রহমান পল্লবসহ দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এর আগে ওই নারীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এনে ছবিসহ মো. সালমান রহমান পল্লবের বিরুদ্ধে একই দিন বিকেল ৩টার দিকে ফেসবুকে পোষ্ট দেন হাফেজ মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম মাদানী।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:- আমি স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ- বলার মতো কোনো ভাষা নেই। এসব কথার কারণে আওয়ামী লীগের লোকজন হয়তো হাসাহাসি করবে, কিন্তু বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না!
আমার এক চাচাতো ভাই তার ভাতিজিকে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। সে নিজে প্রাইভেটকারচালক, আর মেয়েটি পিছনের সিটে শুয়ে ছিল। মেয়েটি বিবাহিত। পথে পূর্বধলা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পল্লব ও তার দলবল মিলে শ্যামগঞ্জ বাজারে রাতে ২০-২৫ জনের একটি দল গাড়ি থামিয়ে টেনে হিঁচড়ে মেয়েটিকে নামিয়ে শ্লীলতাহানি করে। তারা মেয়েটিকে চড়থাপ্পড় মারে এবং জোরপূর্বক নিয়ে যায়।
আমার ভাই তাদের থামাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। মেয়েটিকে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় যোগাযোগ করি। পূর্বধলা থানার ওসি ঘটনাস্থলে গেলেও, আমি ফোনে থাকার সময়ও দেখেছি, ওসির সামনে আমার ভাইকে হুমকি ও গালাগালি করা হচ্ছে এবং আঘাত করা হয়েছে!
আমি পল্লবসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। একইসঙ্গে, যিনি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেই পূর্বধলা থানার ওসিকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি! মাগরিবের পরে আমি সাংবাদিক সম্মেলন করব!
শ্যামগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (ইনচার্জ) মো. রহুল আমিন জানান, উপজেলার লেটিরকান্দা গ্রামের ওই নারী গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে নিজ বাড়ি থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথে শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কের জালশুকা পালপাড়া নামক স্থানে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী তাদের গতিরোধ করে অ্যাম্বুলেন্স থেকে ওই নারীকে তুলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশ থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নূরুল আলম জানান, ভিকটিমকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এআই/এমএ