রংপুর জেলা প্রশাসক অফিসের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিভাগের উচ্চমান সহকারী শেখ ফরিদ আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এর বরাদ্দের কাজের বিনিময়ে ঘুষের টাকা গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদকের হাতে এসেছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একটি বাথরুমের ভিতরে ঘুষ লেনদেনের কথাবার্তা ও ঘুষের টাকা নেওয়ার ভিডিও।
ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একটি বাথরুমে শেখ ফরিদ আহমেদ ক্যামেরার ওপারে থাকা অপর ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন। অপর পাশের লোকটি বলেন, পীরগঞ্জের একটা এবং মিঠাপুকুরের ক’টা জানি আছে। তখন উচ্চমান সহকারী ফরিদ বলেন, ইয়াসিরের তিনটা রয়েছে। ওগুলো করে দেব, যান। দুই-এক দিনের মধ্যে কিছু করে দেব। ওগুলার জন্য কিছু করে দেন।
ক্যামেরার ওপাশে থাকা লোকটি বলেন, করে দেবেন? এরপর ফরিদ বলেন, করে দেব, যান। অপর ব্যক্তি আবার বলেন, কী করব? ফরিদ বলেন, ‘আপনি জানেন, কত টাকা দিতে হইব, বুঝেন নাই। রাকিবুল জানব, রাকিবুল।’
ক্যামেরার ওপাশে থাকা ব্যক্তি এবার বলেন, "আপনি তো আমার ফোন ধরেন নাই। এটাই তো সমস্যা।" ফরিদ তখন বলেন, 'দিয়ার না পারলে লাভটা কী, তার ফোন ধরে লাভটা কী, দিতে যদি না পারি, বেকার মাইন্ড করবেন। টাকা নিয়ে কাজ হবে না, এটার লাভটা কী।' অপর পাশে থাকা ব্যক্তি বলেন, "আচ্ছা হোক, এটা দিতেছি। ফুলবানু টাকা ও শুনেন। এখন আমি টাকা আনি নাই।" তখন ফরিদ বলেন, তাহলে কখন? "আমি মাদ্রাসায় যাই, তারপরে টাকা পাঠিয়ে দেব।" বলেন দৃশ্যের ওপারে থাকা ব্যক্তি। ফরিদ বলেন, বলা যাবেনা কাউকে। ক্যামেরার ওপারে থাকা ব্যক্তির টাকা গোনার শব্দ থামার পর শোনা যায়, "আরও পনেরো।"
এছাড়াও অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ফরিদ হোসেন নিজের চেয়ার ছেড়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা মোতাহার হোসেনের রুমে দরজা বন্ধ করে একজনের সঙ্গে কথা বলছেন। এছাড়া বিভিন্ন নথিপত্র ঘেঁটে পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুরের কতটি মাদ্রাসায় টিআরের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেই বিষয়টি অপরজনকে জানান উচ্চমান সহকারী ফরিদ। এক পর্যায়ে ক্যামেরার অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি আরও পনেরোটি টিআরের কাজ সম্পাদনের কথাবার্তা বললে, তিনি বৈষম্যবিরোধীদের অনুমতি ছাড়া হবে না বলে জানান।
শেষ ভাগে, ক্যামেরার অপর প্রান্তের লোকটি বিকাশে টাকা দেবে কিনা জানতে চাইলে ফরিদ টাকা ক্যাশে দেওয়ার কথা বলেন।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ ও দুর্যোগ শাখার উচ্চমান সহকারী শেখ ফরিদ আহমেদের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি অবজারভারকে জানান, "এ ব্যাপারে আমি জানি না, এগুলো ভুয়া। এআই দিয়ে ভিডিও বানানো হয়েছে," বলে তিনি দাবি করেছেন। তিনি আরও বলেন, "আমার পেছনে এখানকার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের কিছু লোক লেগে গেছে। আমাকে তাড়াবার জন্য তারা এ ধরনের কাজ করছে।"
রংপুর মহানগর শাখার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ও দ্য রেড জুলাই রংপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব মোহাম্মদ নাঈম বলেন, 'আমরা জুলাইতে আন্দোলন করেছি দুর্নীতিমুক্ত, শোষণমুক্ত এক বাংলাদেশ গড়ার জন্য। বাংলাদেশ হবে স্বচ্ছ ও সাবলীল। রংপুরের মাটিতে আবু সাঈদের সাহসী যুবক জীবন দিয়েছে। এই মাটিতে কোনো অনাচার ও দুর্নীতি মেনে নেওয়া হবে না। উচ্চমান সহকারী ফরিদ আহমেদের দুর্নীতির তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, এটাই একমাত্র দাবি।'
এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল অবজারভারকে বলেন, "তার ব্যাপারে মিঠাপুকুরের একটি কাজের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসেসিং চলছে। যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এ ধরনের অপরাধ করে থাকে, তাহলে সে বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।"