Friday | 13 June 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Friday | 13 June 2025 | Epaper
BREAKING: এবার বিচার বিভাগের ৮ স্থাপনার সামনে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা       তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি জব্দ      দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ বন্যায় নিহত ৪৯      ঢাকায় একদিনে ১০ জনের করোনা শনাক্ত      গোপালগঞ্জে বাস ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশু নিহত, আহত ৪      বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তায় আগ্রহী কমনওয়েলথ       

রাষ্ট্র সংস্কার; গণপছন্দের ঐক্যবিন্দু’র খোঁজে

Published : Sunday, 11 May, 2025 at 8:05 PM  Count : 338

আমাদের দেশপ্রেম, ভালোবাসা ও স্বাধীনতা নিয়ে যে ক’জন কবির কবিতা মনের গহীনে স্থান পেয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র– কবি আবুজাফর ওবায়দুল্লাহ। ছাত্র জীবনে তো মুখস্থ করতাম, এখনো সময় পেলে পড়ি এবং ইউটিউবে আবৃত্তি শুনি। কয়েকদিন আগে তাঁর বিখ্যাত কবিতা– ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ পুনরায় পড়লাম। নীচের চরণগুলো আমার দিকে চেয়ে রইল নির্নিমেষ–  
           
          ‘আমি বিষসর্প প্রভুদের
            চির প্রয়াণের কথা বলছি
            দ্বন্দ্ব এবং বিরোধের
            পরিসমাপ্তির কথা বলছি
            সুতীব্র ঘৃণার
            চূড়ান্ত অবসানের কথা বলছি।’

প্রশ্ন জাগে মনে,কবিতার সত্যকথনের মতো আমরা আসলেই কি চাইছি তা? চাইলেও হাঁটছি কি সত্য পথে? আর এক মাস পরই তো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি– কাজেই প্রশ্নগুলো জাগা শুধু স্বাভাবিক নয়,আবশ্যকও বটে। ছাত্র-জনতার সাহসী সংগ্রামের মাধ্যমে বহু রক্তের বিনিময়ে  অনেক বড় স্বপ্ন জাগানিয়া সফল গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমরা এখন কী দেখছি? 

গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন, দলবলসহ দেশ ছেড়ে পলায়নের পর শূন্য মাঠ কেউ না কেউ দখলে নিবে এটাই স্বাভাবিক, সমজাতীয় চরিত্র প্রথম সুযোগ নিবে তা আরও বেশি স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা কি পেরেছি সে প্রবণতাকে রুখে দিয়ে জনমনে স্বস্তি এনে দিতে? 

রাজনীতিতে বহুল উচ্চারিত শব্দগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে – জনকল্যাণ ও গণতন্ত্র। দীর্ঘ দেড় দশকের গুমোট আবহাওয়ার পর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব শেষে শব্দ দুটোর বাঙময়তা বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু আমরা দেখলাম, আশার বিরাট বৃত্তের বিপরীতে নৈরাজ্যের বিশাল চিত্র, যদিও আমাদের ইতিহাসে আছে ‘মগের মুল্লুক’সহ অনেক নৈরাজ্যের যুগ। তবে কষ্টটা এ জন্য বেশি যে, আমরা বাস করি অত্যাধুনিক যুগে–কিছুই লুকানো যায় না, অসভ্যতা আড়াল করা যায় না; অথচ আমরা দেখাচ্ছি নোংরা ময়লা আবর্জনার বাহাদুরি উল্লাস; যার ফলে অমর্যাদার লজ্জায় মুখ লুকাতে চায় আমাদেরই সন্তানগণ। 

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্র এবং নাগরিকের সম্পর্কটা এক ধরণের অম্লমধুর সম্পর্ক – চলন্ত বৈপরীত্য। নাগরিকগণ রাষ্ট্রের মালিক আবার রাষ্ট্র নাগরিকদের শাসন করার মালিক। তবে রাষ্ট্র নিজেই যেহেতু  নাগরিকদের সাধারণ ইচ্ছার ঘনীভুত  সামষ্টিক রূপ, সেহেতু শাসন কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হয় মালিক তথা নাগরিকদের কল্যাণ-অকল্যাণের বিষয়টি। এখানেই গণপছন্দের ভিত্তিতে সামষ্টিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি আবশ্যক হয়ে পড়ে। অর্থনীতিতে সামষ্টিক কাম্য বিন্দুর বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় ‘পেরটো অপ্টিমালিটি তত্ত্বে’– কাম্য বিন্দু থেকে সরে গেলে অবশ্যই একজনের লাভ এবং অন্য জনের ক্ষতি হবে; আবার উপযোগ বা সন্তুষ্টির আন্তঃব্যক্তিক তুলনা করা সম্ভব নয় বিধায় কারোর ক্ষতি না করে একজন ব্যক্তিরও যদি লাভ বাড়ানো  যায়, তবে সেই  সিদ্ধান্ত সামাজিক কল্যাণ সর্বোচ্চ করবে। অর্থাৎ কল্যাণ অর্থনীতির মূল সুর– ‘সর্বাধিক মানুষের জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণ’ নিশ্চিত করা যাবে। এখন অবশ্য, শুধু মানুষ নয়, অন্য সকল জীবের অধিকার নিশ্চিতকরণও এসেছে এর আওতায়।  

কল্যাণ অর্থনীতির ক্ষেত্রে গণপছন্দ ও সামষ্টিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে সবচেয়ে সাড়া জাগানো তত্ত্ব হলো নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ কেনেথ. জে. এ্যারো’র ‘দ্য ইম্পসিবলিটি থিওরিয়াম’,যার মূল কথা হ'ল – ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করে ব্যক্তিপছন্দগুলো যোগ করে ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত গণপছন্দের ঐক্য বিন্দুর  চিত্র পাওয়া অসম্ভব; গাণিতিকভাবে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। তবে তার এ থিওরিয়ামের মৌল দুর্বলতা এই যে, গাণিতিক মডেল দিয়ে যে সামাজিক-রাজনৈতিক গতিময়তা বুঝা সম্ভব না তা এখানে পরীক্ষা করা হয়নি। অথচ বাস্তবতা এই যে, পরিবার-গোষ্ঠী থেকে শুরু করে রাষ্ট্র, এমনকি বিশ্বসংঘ পর্যন্ত সবগুলো সংগঠন, উহাদের চিরায়ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই সবসময় ঐক্যবিন্দু খুঁজে। এ বিন্দু খোঁজাটাই গতি, বিপরীতে আছে স্থবির জীবন– মৃত মাছের ফ্যাকাশে সাদা চক্ষু, আকাশেও পায় না কোনো সঙ্গী, এমনকি  মৃত নক্ষত্রও। তবে পদার্থ বিজ্ঞানের কল্যাণে পাই আরেকটি দরকারি শব্দ– গতিজড়তা, গতিশীল বস্তু ভালোবাসে গতিময়তা। মানুষ, প্রাণি তো অবশ্যই,বস্তুও বটে। শুধু মানুষ নয়, মহাবিশ্বের সকল অস্তিত্ব, অবশ্যই মহান সৃষ্টিকর্তা বাদে, বস্তু ও প্রাণের অপূর্ব সহাবস্থানে এবং পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে  চলছে  চক্রাকার। 

পৃথিবী, মহাবিশ্বের এমনকি উহার সামান্য অংশ সৌরজগতের তুলনায় একটি সর্ষে দানা মাত্র; তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো– এখানে মানুষ নামের এমন এক প্রাণি বাস করে, যার মধ্যে মহাবিশ্বের, এ যাবতকাল পর্যন্ত  আবিস্কৃত, সব বৈশিষ্ট্য বিরাজমান। বিশেষ করে মানুষের মনোজগতের চিত্র – বড়ই জটিল, বড়ই কঠিন। ব্যক্তি মানুষই যদি এতো জটিল, এদের সামষ্টিক অবস্থার কথা নাই বা বললাম। কিন্তু যতই জটিল হোক, সামষ্টিক পছন্দ চিহ্নিত করা না গেলে সামাজিক কল্যাণার্থে কোন নীতি প্রণয়ন করা ঠিক হবে না। আগেই বলেছি, চূড়ান্ত বিচারে ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গতভাবে নিরঙ্কুশ গণপছন্দ খোঁজে পাওয়া অসম্ভব, সেটা দেখিয়েছে ‘দ্য ইম্পসিবিলিটি থিওরিয়াম’। তবে এ তত্ত্ব কিন্তু সব দরোজা বন্ধ পেয়ে খুলে দিয়েছে সবক’টি জানালা– কল্যাণ অর্থনীতির ফাউন্ডেশনকে করেছে শক্ত। গাণিতিক মডেলে গণপছন্দের কাম্য বিন্দু পাওয়া অসম্ভব হলেও সুষ্ঠু সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গতিময়তা সম্ভব করে তোলে– ‘সর্বাধিক মানুষের জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণ’।  এখানেই ঠাঁই নিয়েছে গণতন্ত্র। অবশ্য, বিপরীতটাও সত্য হতে পারে যে, অর্থনৈতিক কল্যাণ আশ্রয় নিয়েছে গণতন্ত্রের কোলে। আমার মনে হয়, পরেরটাই সঠিক।  কল্যাণ অর্থনীতিতে মৌলিক অবদানের জন্য  নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ‘ডেভেলপমেন্ট এ্যাজ ফ্রিডম’ বইয়ের মূল বার্তা এটাই যে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নিশ্চত করে সঠিক উন্নয়ন এবং সর্বোচ্চ সামাজিক কল্যাণ। কার্ল মার্ক্স ‘কমিউনিজম’কে বলেছেন  সর্বোচ্চ গণভোগের চূড়ান্ত স্তর, যেখানে প্রযুক্তির উৎকর্ষ নিশ্চিত করে সরবরাহের পর্যাপ্ততা, কাজেই গণপছন্দের সাংঘর্ষিক অবস্থা সেখানে অপ্রাসঙ্গিক। অর্থনীতিবিদগণের তত্ত্ব ও বাস্তব উদাহরণ ব্যাখা বিশ্লেষণ শেষে উপসংহারে  বলা হয়েছে–  ‘ডিসেন্ট্রাইজড সোসালিষ্ট ইকোনমি’ নিশ্চিত করতে পারে সর্বোচ্চ সামাজিক কল্যাণ। এর জ্বলন্ত  উদাহরণ হিসেবে চীনের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা  টিকে থাকার চেষ্টা করছে – দেখা যাক কী হয়! 

অপরদিকে পশ্চিমা বিশ্বের দর্শন বলে– চীনের ব্যবস্থা শুধু অপছন্দীয় নয়, গণতন্ত্রের বিপরীতেও বটে। চীনের উদাহরণ না হয় বাদ দিলাম, কল্যাণরাষ্ট্র বলে যাদেরকে অভিহিত করি– নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা এদের সকলেই পশ্চিমা গণতন্ত্রের সাথে বাজার অর্থনীতির মডেল অনুসরণ করে। মনে রাখা আবশ্যক যে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা একটা অনিঃশেষ  প্রক্রিয়া– যেখানে গণতন্ত্র মানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চালু রাখা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এই যে,  আমাদের বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, এমনকি যখন ছিলাম পাকিস্তান আমলে তখনও, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চলতে দেওয়া হয়নি – বলা হয়েছে, ‘গণতন্ত্র আমাদের জন্য উপযোগী নয়’, অথবা ‘খাঁটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যই বাইরের  হস্তক্ষেপ আবশ্যক’। এ দুটোই আসলে অজুহাত বৈ কিছু নয়–যেমন চলছে বর্তমান যুগ । ‘নতুন বন্দোবস্তে’র নামে চলছে ‘তুঘলকি কাণ্ড’ – রাষ্ট্র সংস্কারের নামে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আবরণে।

সকল কালে, সকল স্থানে–রাজ্য, সাম্রাজ্য বা রাষ্ট্র যে নামেই ডাকি না কেন তার কার্যাবলী পরিচালিত হয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়, তা হোক কতৃত্ববাদী কিংবা গণতান্ত্রিক। সেখানে বিরোধী শক্তি বা বিরোধী মত বা বিরোধী গোষ্ঠী থাকাটাই স্বাভাবিক এবং ঐকমত্য  প্রতিষ্ঠাও হয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শাসন ব্যবস্থার চরিত্র অনুযায়ী। তবে গণকল্যাণ  নিশ্চতকরণে গণতন্ত্রের বিকল্প কোন পথ সৃষ্টি হয়নি আজও। অথচ এর বাইরে গিয়ে ঐকমত্য খোঁজা যে কীসের ঈঙ্গিত তা বুঝতে কষ্ট করতে হয় না।  

আচ্ছা ধরে নিলাম সাচ্চা নিয়তে খুঁজছি ঐক্যবিন্দু ; কিন্তু সঠিক প্রক্রিয়া কী হবে?  বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষের পছন্দ-অপছন্দ কীভাবে মিলাবো কোন মেট্রিক্স দিয়ে? অবশ্য এবারই প্রথম, একটি কমিশন টেম্পলেট দিয়ে সহজিকরণ করেছেন, যদিও রাজনীতির ক্ষেত্রে গাণিতিক মডেল  এখনো প্রয়োগ যোগ্য  হয়েছে বলে জানা নেই। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে না হয় তা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে, যা খুবই ভালো কথা, তো ‘এজেন্ট-মালিক দ্বন্দ্ধ’ মিটাবো কেমনে? বাংলাদেশের মালিক আঠারো কোটি নাগরিক, রাজনৈতিক দলের সংখ্যা শতের নীচে, অবশ্য যেভাবে গজাচ্ছে নতুন নতুন দল, শতেক পার হয়ে বেশিও হতে পারে শীঘ্রই।  নাগরিকগণ রাষ্ট্রের মালিক, রাজনৈতিক দলগুলো হলো এজেন্ট –কাজেই গণপছন্দের ক্ষেত্রে দ্বন্ধ থাকাটাই স্বাভাবিক। এ দ্বন্ধের নিরসন করে কেবলমাত্র নিরবচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক  প্রক্রিয়া; মহাপণ্ডিতগণের মহাউর্বর মস্তিষ্ক যাই বলুক না কেন, সকল নাগরিককে গণনায় না এনে, বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ায় ঐক্যবিন্দু খোঁজা ইন্টেলিক্সুয়াল লাক্সারি বৈ কিছু নয়। এমনকি নবী রাসুলগণও সে পথ করেননি অবলম্বন। মহান আল্লাহ পাকও তাঁদেরকে পাঠিয়েছেন অথবা পছন্দ করেছেন সংশ্লিষ্ট কওম থেকেই কোন একজনকে। এমনকি তাঁদের ভাষা-সংস্কৃতিও রেখেছেন অটুট। মহান সৃষ্টিকর্তা আসমানী কিতাবগুলোও,যেগুলো তাঁরই ঐশী বাণী, নাজিল করেছেন স্ব স্ব ভাষায়। ঐক্যের আহবান সবকটিতেই বিদ্যমান থাকলেও অস্তিত্বের মৌল বিষয়ে আপস করা  হয়নি, আপসের চেষ্টা করতেও মানা করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ‘সূরা কাফিরূন’, যার শানে নজুল হ’ল– ‘কিছু কাফির রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর নিকট একটি আপোস প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল এই মর্মে যে, আমরা আপনার মা'বূদ-এর ‘ইবাদত করি এবং আপনি আমাদের দেবতার ‘ইবাদত করুন। এইভাবে একটি মিশ্রিত দীন কায়েম হউক। তাহারই জবাবে এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়’ (সূত্র: পৃ:১০৩৫, আল- কুরআনুল করীম,তৃতীয় সংস্করণ, আগস্ট ২০০৪, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, ঢাকা)। আগ্রহী পাঠকগণ পুরো সূরাটি  পড়ে এর গভীর তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারেন।  

এবার দেখি আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মানুষের কৃত্যকর্মের ইতিহাস–যেমন, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন,একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এখানেও পাই একই কথা একই সুরে; রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে  মেনে  নিলে কিংবা আরবি হরফে বাংলা লিখে আমাদের মাতৃভাষা বাঁচিয়ে রাখার আপসরফা হলে অথবা পশ্চিম পাকিস্তানিদের ঔপনিবেশিক তকমায় বাঙালি মুসলমানকে ‘খাঁটি মুসলমান’ বানিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করা হলে বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশ, দুটোরই মৃত্যু হতো অবধারিতভাবে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা আবশ্যিক এ দুটো বিষয়ে আপস না করে, সংঘর্ষ এড়িয়ে না গিয়ে সাহসের সাথে বুকের রক্ত ঢেলে মোকাবিলা করছিলেন বলেই আজকে আমরা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার পাটাতনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি। হায়রে ট্র্যাজেডি! 

মধ্যযুগে ট্রাজেডির উর্বর ভূমি,রাজনৈতিক খুনাখুনি মারামারি,সিংহাসন দখল,প্রজাপীড়ন, ছিল পশ্চিমা দেশগুলো; ওদেরই রচিত ইতিহাস, সাহিত্য, চিত্রকলা পড়ে জানতে পারি তা। এ চিত্রগুলো ওরা ঔপনিবেশিক আমলে আমাদের এখানে রপ্তানি শুরু করেছে –এখনো চলছে তাই,তবে মোড়ক পাল্টে।  আমরাও, বেশির ভাগ না বুঝে, সামান্য অংশ বেনিয়া-দালাল-অলিগার্ক জেনেশুনে, গিলেছি ‘ম্যাজিক পিল’; এ বড়ির কথা পরে বলছি। তার আগে কমিশনের রূপ-রস-গন্ধ, সর্বোপরি এর চরিত্রের চিত্রায়ণ নিয়ে দুটো কথা বলা আবশ্যিক মনে করি। কমিশন গঠন শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করার চিরায়ত কৌশল। সামষ্টিক ব্যবস্থায় সংকট দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক সত্য। সংকটকালে আগুন জ্বলে দাউদাউ; রাজাসন পর্যন্ত যেন উহা না ছড়ায় এজন্য দমকলবাহিনী প্রথমেই  কন্টেইমেন্ট তত্ত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়– চারপাশে তৈরী করে হিমশীতল বৃত্ত, কমিশন থাকে কেন্দ্রে। উদ্দেশ্য দেখায় মহত, জটিল রোগের কারণ উদ্ঘাটন এবং নিরাময়ের প্রেসক্রিপশন দেওয়া, সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-অধ্যাপক একসাথে গোলটেবিল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, নির্ধারণ করেন চিকিৎসা প্রটোকল। তবে ইতিহাস বলে, সংকটের ঘূর্ণিঝড় চলে গেলে, অবশ্যই রোগী মারা যাওয়ার পর ঝড় চলে যায় স্বাভাবিক নিয়মে, ঐ পরামর্শ-প্রটোকল ধূলায় লুটায়। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সংস্কার কমিশনগুলো গঠনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন এবং জাতির সংকটকালে, বিশেষ করে অলিগারকদের সংঘবদ্ধ ফ্যাসিবাদের কবলে পড়ে রাষ্ট্রের  অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট ও বিকৃত হওয়ায়, কমিশন গঠন আবশ্যিক ছিল। কিন্তু কমিশনের রিপোর্টগুলো গতানুগতিক প্রটোকল থেকে বের হতে তো পারেই নি বরং এমন বিতর্কের অবতারণা করেছে যা রোগ নিরাময়ের চেয়ে অসুস্থতাকে দীর্ঘায়িত করবে বলে জনমনে ধারণা জন্মেছে। মনে রাখা আবশ্যক যে, জনগণের ধারণা বাস্তব সত্যের চেয়ে হাজার গুন বেশি শক্তিশালী। কাজেই অনৈক্যের যে চিত্র আমরা খালি চোখে দেখছি,আতশি কাচে দেখা যাবে আরো পরিস্কার, তাতে হতাশার ধূসর মেঘ কেটে যাবে, ঝলমলে আকাশের দেখা মিলবে– এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

আশার এ ক্ষীণ রেখা আরো ক্ষীণ হয় আমাদের চারিত্রিক দুর্বলতা ও ভূ-রাজনৈতিক কূটনীতির বেড়াজালে! এমনটাই আশঙ্কা করেছিলাম দু’বছর আগে–তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার কর্তৃক আরকেটি প্রতারণামুলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিকালে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ ডুলান্ড লু এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিক দৌড়ঝাঁপের পটভূমিতে  আমার লেখা ‘ম্যাজিক পিল’ কবিতায়–

 ‘উড়োখবর নয়, ওহীনামাসহ ম্যাজিক পিল 
      মেঘ থেকে ঝরে পড়ছে উঠানে; এবং 
    এই আকালে উহা পাওয়াও যাবে বিনামূল্যে!
      হুড়োহুড়ি লেগে গেছে কে কার আগে 
      পিল গিলে পোয়াতি হবে।
      অবশ্য এর আগেই শেষ হয়েছে 
      দেন-দরবার দর-কষাকষি পর্দার আড়ালে।
   উন্মুখ দর্শকজনতা বরাবরের মতোই বোকা
গাছের প্রথম লাউ-শসা, হাঁস-মুরগি-ডিম
      বকনা বাছুর, কলার কাদি সবই 
      সোপর্দ করবে হুজুরের দরবারে। 
      উনার দোয়ার বরকতে ভরে ওঠবে 
      মহাজনদের ক্ষমতার ভাণ্ডার, 
      জনতা ফিরে যাবে শূন্যহাতে 
      পূর্বপুরুষের রক্তমাখা  ইতিহাসে।
     বেদনার কালি ও কলমে আবারো লেখা হবে 
      উর্বর জমিন বন্ধ্যা হওয়ার করুণ উপাখ্যান।’

০৮ মে ২০২৫
ঢাকা। 




LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close