যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর, জম্মু-কাশ্মিরসহ সব সীমান্ত এলাকায় সেনা উপস্থিতি কমাতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ভারত ও পাকিস্তান। সোমবার (১২ মে) বিকেলে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেন।
বৈঠকে ভারতের পক্ষে অংশ নেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই এবং পাকিস্তানের পক্ষে মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লাহ। সেখানে দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্রাসী কর্মকাণ্ড না চালানোর প্রতিশ্রুতি দেয়।
বৈঠক সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের ডিজিএমও পর্যায়ের বৈঠকের নির্ধারিত সময় ছিল সোমবার দুপুরে। তবে পরে সময়সূচি পরিবর্তন করে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে সেনা উপস্থিতি হ্রাসের বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত পোষণ করে।
প্রায় ৪৫ মিনিট স্থায়ী হয় এ বৈঠক। বৈঠক শেষে ভারত বা পাকিস্তান—কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আপাতত জম্মু-কাশ্মির এবং ভারত-পাকিস্তানের অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এবং পাকিস্তানের রেঞ্জার্স। সীমান্তে সেনাবাহিনী অবস্থান করবে, তবে সংঘাতের আশঙ্কা না থাকলে তারা সক্রিয় ভূমিকা নেবে না।
আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুই দেশের সীমান্তরেখার এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো হেলিকপ্টার এবং দশ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো যুদ্ধবিমান প্রবেশ করবে না।
পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা এবং ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত সংঘাত চলার পর যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পরমাণু শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর, এই প্রথম সামরিক পর্যায়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফের ডিজিএমও পর্যায়ে বৈঠক হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। নিহতরা সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)’ নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ।
এই ঘটনার জেরে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে ছিল সিন্ধু নদ চুক্তি পুনর্বিবেচনা এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ পাল্টা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
চলমান উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান চালায় পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরসহ কয়েকটি এলাকায়। নয়াদিল্লির তথ্যমতে, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয় ৩১ জন এবং আহত হয় ৫৭ জন।
এর তিন দিনের মাথায় পাকিস্তান চালায় ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’। ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ একটি আরবি শব্দগুচ্ছ, যার বাংলা অর্থ সীসার প্রাচীর।
এই পাল্টাপাল্টি সামরিক অভিযানের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় শনিবার থেকে।
আরএন